১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:৫৭

প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বই বছরের শুরুতে পেলেও মাধ্যমিকের কবে?

২০১২ সালের কারিকুলামের আলোকে পরিমার্জিত বা সংশোধিত বই দেবে সরকার  © সংগৃহীত

আসন্ন ২০২৫ সালের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার, যেখানে ১৪’শ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, পুরোনো কারিকুলামের বইগুলোতে বিভিন্ন অংশে পরিমার্জন এবং সংশোধন শেষে মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বই যথাসময়ে হাতে পাবে বলে আশাবাদী বই বিতরণের সরকারি এই তদারক সংস্থা।

সরকার পরিবর্তনের পর ২০২২ সালের সমালোচিত কারিকুলাম বাতিল করে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের ২০১২ সালের কারিকুলামের আলোকে পরিমার্জিত বা সংশোধিত বই দেবে সরকার। এতে প্রাথমিকের সব বই শিক্ষাবর্ষের শুরুতে তুলে দেওয়ার কথা বললেও মাধ্যমিকের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বই বিতরণের সম্ভাব্য তারিখ জানাতে পারেনি এনসিটিবি। তারা বলছে, শিক্ষাবর্ষের শুরুতে মাধ্যমিকের ৫-৬টি সাবজেক্টের বই অন্তত ৮০ ভাগ তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। 

মুদ্রণসংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বল্প সময়ে বই পরিমার্জন ও সংশোধন শেষে ছাপাখানায় আসতে দেরি হয়েছে। ফলে বছরের শুরুতে কিছু বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হলেও সব বই ছাপা শেষ হতে অন্তত দেড় মাস বেশি সময় লাগতে পারে। 

তবে সময় বেশি লাগলেও শিক্ষার্থীদের হাতে নির্ভুল নতুন বই তুলে দিতে চায় (এনসিটিবি)। এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মদ ফাতিহুল কাদীর জানান, ‘বেশ কয়েকটি জায়গায় ছোটবড় অনেক পরিবর্তন আসছে নতুন বইয়ে। আমি বিক্ষিপ্তভাবে বলতে চাইনা। তবে আমরা চেষ্টা করছি স্বল্প সময়ে নির্ভুল বই শিক্ষার্থীদের হতে তুলে দিতে।’

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন পরিমার্জন এবং সংশোধনের কারণে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে দেরি হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে পরিবর্তিত বিষয়গুলো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের গল্প, পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদ থেকে শেখ হাসিনার বিভিন্ন উদ্ধৃতি বাতিল, গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের কথা অন্তর্ভুক্ত, মূল্যবোধের বিষয় এবং গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। 

এছাড়াও পরিবর্তিত বিষয়গুলোর মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেটিকে কাটছাঁট করে যুক্ত করা হচ্ছে জিয়াউর রহমানসহ অন্যদের ভূমিকাও। এছাড়া মেজর জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক এবং মাওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমেদ, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীসহ যার যা ভূমিকা সেগুলো ইতিহাসের অংশ যুক্ত হচ্ছে।

পাঠ্যবইয়ের কোন অংশে কতটুকু পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ. কে. এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘বিভিন্ন বইয়ের বিভিন্ন গল্পের অংশ পরিবর্তন হয়েছে। কোথাও আংশিক, কোথাও দু’একটি বাক্য আবার কোথাও পুরো গল্প পরিবর্তন হয়েছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘চলতি সপ্তাহের শুরুতে মন্ত্রণালয়ের সাথে মিটিং হয়, সেখানে বেশিরভাগ পরিবর্তন অনুমোদন পায়। আর দুয়েকটি বিষয় এখনও বাকি রয়েছে। সেগুলোও সমাধান হয়ে যাবে।’

পাঠ্যবই শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার বিষয়ে শঙ্কা নিয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান জানান, কোন শঙ্কা নেই। তবে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তক কবে হাতে পাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তক প্রেসে গিয়েছে এবং ইতোমধ্যে বই ছাপা শুরু হয়েছে। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ১৬ লক্ষ বই আগামী ২-১ দিনের মধ্যে ছাপা হয়ে যাবে। ১-৫ শ্রেণি পর্যন্ত সকল বই সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে।’

শিক্ষার্থীরা জানুয়ারির শুরুতে বই পাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পহেলা জানুয়ারি যেহেতু আগের মতো বই উৎসব হবে না কাজেই বিষয়টি নিয়ে আমরা সেভাবে ভাবছি না। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির সকল বই ডিসেম্বরের ২০ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে চলে যাবে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা বই পাবেন।’

মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা কবে বই হাতে পাবে জানতে চাইলে প্রফেসর রিয়াজুল হাসান জানান, ‘৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির ৫ থেকে ৬টি বই ডিসেম্বরের ২০ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে অন্তত ৮০ শতাংশ ডেলিভারি পয়েন্টে চলে যাবে, সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা বই পাবেন। বাকি বইগুলো পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে আমরা দ্রুত সময়ে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করব। সবকিছু ঠিক থাকলে বিশেষত প্রেসের কাজ ঠিকঠাক চললে আশা করছি বাকি কাজও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।’