স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে পাঠ্য বইয়ে ফিরছে জিয়াউর রহমানের নাম
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরিবর্তন হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবই। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে পাঠ্যবইয়ে ফিরছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমান। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে পরিমার্জনের কাজ শেষের পথে। এমন তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্টরা।
এনসিটিবির একটি সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সকল শ্রেণির বইগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্ভর অংশে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে ২৭শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন মেজর জিয়াউর রহমান। এমন বক্তব্যকে পরিবর্তন করে ২৬শে মার্চ শহীদ প্রেসিডেন্ট (তৎকালীন মেজর) প্রথমবার নিজেই চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পরের দিন ২৭শে মার্চ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে পুনরায় স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বলে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন: পাঠ্যবইয়ে আসছে যে পাঁচটি পরিবর্তন
বিষয়টির শিরোনামে ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এমন অংশকে পরিমার্জন করে ২৬শে মার্চ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা মর্মে উল্লেখ করা হবে। এছাড়াও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত কারিকুলামকে ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এনসিটিবির পরিমার্জনের কাজ প্রায় শেষের পথে। নভেম্বরের শুরুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মাধ্যমিক শাখার ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ ড. মো: জুলফিকার হায়দার জানান, ‘মন্ত্রণালয় থেকে পরিমার্জনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়ও সেখানে অন্তর্ভুক্ত আছে। তবে ঠিক কী ধরনের বিষয় পরিমার্জন করা হবে সেটার জন্য নির্দিষ্ট একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি ভালোভাবে বলতে পারবেন।’
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের সাথে আমাদের আলাপ আলোচনা হয়েছে, এনসিটিবির কাজ হলো পরিমার্জন সম্পন্ন করা। পরিমার্জন শেষ হলে আমরা সেটা মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করব। সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় যে বিষয়গুলো রাখার প্রয়োজন মনে করবে সেগুলো বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে যুক্ত করবে। কোন শ্রেণীতে কতটুকু যুক্ত করবে সেটা মন্ত্রণালয়ের বিষয়।
আরও পড়ুন: শহীদ আবু সাইদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাঁথা পড়বেন হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবির মধ্যে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে এখানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আসবে। তবে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো সম্ভব নয়। আমাদের একটা প্রস্তাবনা থাকবে সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর যে বিষয়গুলোর পরিবর্তন দরকার সেটা তারা ঠিক করবে। সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারবেন পরিমার্জন কমিটিতে যারা কাজ করছেন তারা।
কবে নাগাদ পরিমার্জন চূড়ান্ত হবে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা বিষয়গুলো উপস্থাপন করব, তারপরে মন্ত্রণালয় এটা দেখে পরবর্তীতে প্রিন্টের জন্য প্রেরণ করবে।’
জানা গেছে, দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন শিক্ষাক্রম বা জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করে ২০২৬ সাল থেকে তা কার্যকর করা হবে। তার আগে ২০২৫ সালে শিক্ষার্থীদের জন্য ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের বই পরিমার্জন করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
প্রতিবছর স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক পর্যায়ের ১ কোটি ৮৯ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ২৩ কোটি কপি বই ছাপায় এনসিটিবি। তাদের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, মে-জুন মাসে বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রুফ রিডারদের দেখানোর কথা ছিল। তবে এবার সেপ্টেম্বরে বই সংশোধনের ঘোষণা এসেছে। এতে আগামী বছরের শুরুতে নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। যদিও জানুয়ারি মাসেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন এনসিটিবি কর্মকর্তারা।