বিশ্বের পাঁচটি রহস্যজনক বই
বই আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বইকে বলা হয় সবথেকে ভালো বন্ধু। কিছু বই আমাদের জীবনের এই বন্ধু হয়ে ওঠে, কিছু বই আমাদের জ্ঞান বাড়ায়, আমাদের মানসিকতাকে উন্নত করে তোলে, কিছু বই আমাদের সফল করে তোলে। আবার কিছু বই আমাদের অন্ধ বিশ্বাসের দিকে ঠেলে দেয়। তবে কিছু বইয়ের রহস্য আমাদের ভাবায়। এমনই ৫ টি রহসজনক বইয়ের নাম জেনে নেওয়া যাক।
দ্য ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি
‘ভয়নিচ পাণ্ডুলিপি’, একটি আগাগোড়া রহস্যাবৃত বইয়ের নাম। উইলফ্রিড ভয়নিচ নামক একজন বই বিক্রেতা প্রথম এটি সংগ্রহ ও পরিচিত করায়, তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। বইটিতে প্রায় ১৭ হাজার বর্ণমালা আছে। প্রযুক্তির সাহায্যে বইটির ৪টি পৃষ্ঠার কার্বন ডেটিং করা হয়। জানা যায় বইটি আনুমানিক ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের সময় লেখা হয়েছে। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৩৪ টি।
বইটি নিয়ে একেক গবেষক একেক রকম মত প্রকাশ করেছে। এর সবচেয়ে বড় রহস্য এর ভেতরে থাকা বর্ণগুলো। অনেক গবেষক মত দেন এগুলো সাংকেতিক বর্ণ। এছাড়াও বইটিতে অনেক হাতে আঁকা চিত্রও রয়েছে। এগুলো দেখে অনেকের মত এটি কোনো বিজ্ঞানীর নোটখাতাও হতে পারে। পাণ্ডুলিপিটি গাছপালা, জ্যোতিষশাস্ত্রীয় চিহ্ন এবং অদ্ভুত চিত্রের চিত্রে ভরা, যার কোনটিই পরিচিত উদ্ভিদের সাথে মেলে না। আবার গোঁলাকার বিভিন্ন চিত্র দেখে অনেকের মত এটি জোতিষবিদ্যার কোনো বই হলেও হতে পারে। বইয়ের ভাষার রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে কেউ কেউ বলেই ফেলেছেন এটি লেখাই হয়েছে সবাইকে বিভ্রান্ত করতে। অসংখ্য তত্ত্ব থাকা সত্ত্বেও, ভয়নিচ পাণ্ডুলিপির বিষয়বস্তু এবং উদ্দেশ্য একটি গভীর রহস্য হয়ে রয়ে গেছে।
কোডেক্স সেরাফিনিয়াস
কোডেক্স সেরাফিনিয়াস একটি কাল্পনিক বিশ্বের একটি পরাবাস্তব বিশ্বকোষ। সত্তরের দশকের শেষের দিকে ইতালীয় শিল্পী লুইগি সেরাফিনি তৈরি করেছেন কোডেক্স সেরাফিনিয়াস। অনেকের মতে, কোডেক্সকে নিছক একটি শিল্প হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, বিশ্বকে বোঝানোর চেষ্টা করা যে অযৌক্তিক তারই উপর একটি ভাষ্য, বা কেবলই সৃজনশীলতার একটি বিস্তৃত অনুশীলন। সেরাফিনি তার কাজের পেছনের অর্থ সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করেননি, পাঠকদের অনুমান করতে দিয়েছেন। এতে ঘনিয়েছে আরও বেশি রহস্য।
রোহঙ্ক কোডেক্স
রোহঙ্ক কোডেক্স হল উনিশ শতকের গোড়ার দিকে হাঙ্গেরিতে আবিষ্কৃত একটি হাতে লেখা বই। এটি অজানা ভাষায় লেখা প্রায় ৪৫০ পৃষ্ঠার একটি বই। সামরিক, ধর্মীয় এবং সম্ভবত জ্যোতিষশাস্ত্রীয় থিমগুলিকে চিত্রিত করে অদ্ভুত চিহ্ন এবং চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে বইটিতে। পাঠ্যটিকে পাঠোদ্ধার করার অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সম্ভব হয়নি। অনেকেই ধারণা করেন, এটি একটি প্রাচীন হাঙ্গেরিয়ান বা সংস্কৃত-সম্পর্কিত লিপি হতে পারে। এতে করে কোডেক্সের উত্স এবং অর্থ অস্পষ্ট থেকে যায়। আবার অনেকেই এটিকে জালিয়াতি বলেন। তবে বেশিরভাগই মনে করেন, এটি একটি বৈধ কিন্তু এখনও ব্যাখ্যাহীন ভাষায় লেখা একটি বই।
দ্য বুক অফ সোয়গা
দ্য বুক অফ সোয়গা, "আলদারিয়া" নামেও পরিচিত। এটি ষোল শতকের ল্যাটিন ভাষায় লেখা বই যাতে রয়েছে যাদু, জ্যোতিষশাস্ত্র এবং দানববিদ্যা নিয়ে বিভিন্ন কথা। এই বইটি খ্যাতি অর্জন করে যখন বইটি আবিষ্কার করেন বিখ্যাত এলিজাবেথান পণ্ডিত এবং জাদুবিদ্যাবিদ জন ডি। ডি বইটির পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তা করতে পারেনি বলে জানা গেছে। পাণ্ডুলিপিতে চিঠির জটিল সারণি রয়েছে যা পণ্ডিতদের বিভ্রান্ত করেছে। যদিও বইটির দুটি কপি পাওয়া গেছে, তবে বইটির সঠিক প্রকৃতি এবং উদ্দেশ্য এখনও অস্পষ্ট। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে এটিতে একটি 'সাইফার' বা 'লুকানো জ্ঞান' রয়েছে যা এখনও আনলক করা হয়নি।
দ্য রিপলি স্ক্রল
রিপলি স্ক্রল হল ইংরেজ আলকেমিস্ট জর্জ রিপলির নামানুসারে একটি আলকেমিক্যাল পাণ্ডুলিপি। জর্জ রিপলি এটি পনেরো শতকে তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়। বইটিতে একাধিক কপি রয়েছে। বইটিতে বিভিন্ন প্রতীকী চিত্র এবং পাথর তৈরির প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে। সেই পাথর নাকি আবার একটি কিংবদন্তি পদার্থ যা অমরত্ব প্রদান করে এবং ভিত্তি ধাতুকে সোনায় পরিণত করে বলে বিশ্বাস করা হয়। রিপলি স্ক্রলের চিত্রগুলি রূপক এবং অত্যাশ্চর্য প্রতীক যা ব্যাখ্যা করা কঠিন। কেউ কেউ এটিকে প্রকৃত আলকেমিক্যাল গাইড হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ এটিকে আধ্যাত্মিক রূপান্তরের প্রতীকী উপস্থাপনা হিসেবে দেখেন। তবে যে যেভাবেই দেখুক রহস্য কিন্তু থেকেই যায়।
আচ্ছা যদি সত্যিই বইগুলো পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয় তবে কী পাওয়া যেতে পারে? সত্যিই কী মানুষ অমরত্বের সন্ধান পাবে? নাকি যেকোনো বস্তুকে সোনা বানিয়ে ফেলার জ্ঞান অর্জন করতে পারবে? নাকি যাদু, জ্যোতিষশাস্ত্র এবং দানববিদ্যা নিয়ে বিজ্ঞ হয়ে যাবে? বইগুলো কি কোন প্রতিভাবান চিত্রকরের স্বপ্ন দৃশ্যের বিস্তৃত বর্ণনা নাকি হারিয়ে যাওয়া কোন সভ্যতার অজানা কোন সংস্কৃতির বিশদ বিবরণ ? কিংবা এমন কি হতে পারে পুরো বিষয়টার আসলেই কোন অর্থ নেই ? আপনি কী মনে করেন ? আপনি কোন বইটি পড়তে আগ্রহী?