শাহেদ আলীর জিবরাইলের ডানা
গল্পটা আট বছরের একটি শিশুর। শিশুর নাম নবী। মা হালিমার সাথে খেয়ে না খেয়ে জীবন তার। গল্প এগোতে থাকে এভাবেই। এরপর গল্পে আসে ঘুড়ি। কীসের ঘুড়ি? কার ঘুড়ি? আজ বলবো সেই গল্প।
একটা ছোট শিশু চায় তাদের অভাব মিটে যাক। আল্লাহর কাছে তাই আর্জি জানাতে সে উপায় বের করে সে ঘুড়ি উড়িয়ে আল্লাহর কাছে বার্তা পাঠাবে। তার আশা একদিন জিবরাইল তার ঘুড়ি ঠিক আল্লাহর কাছে পৌঁছে দেবেই। সে কল্পনায় দেখে জিবরাইল তার ডানা ঝাপটিয়ে সাত আসমান ভেদ করে উড়ে যাচ্ছে আল্লাহর কাছে তার ঘুড়ি নিয়ে। যেখানে ঘুড়িতে লেখা থাকবে তার ক্ষুধার কথা।
কীসের ক্ষুধা? ক্ষুধা নানারকম। শরীরের ক্ষুধা, ক্ষমতার ক্ষুধা, রাজা হওয়ার ক্ষুধা, সময়ের ওপর রাজত্ব করার ক্ষুধা। নবীর ক্ষুধা অবশ্য কেবলই পেট ভরে খাওয়ার। নবীর সেই ঘুড়িটা চালনা করে সেই ক্ষুধার রাক্ষস।
পরিশেষে আবার বলি, চক্রের কথা। ক্ষমতার চক্র। ক্ষমতা ব্যাপারটাই মনে হয় সেটা। ক্ষমতার চক্র। ক্ষুধার নেশায় মানুষ ছুটে মরে সেই চক্রে। ছুটতে ছুটতে পেরিয়ে যায় বন্ধুত্ব, মৃত্যু, আত্মা কিংবা একটা ঘুড়ি। ক্ষমতার ক্ষুধা উড়িয়ে দেয় ঘুড়ি। উড়তে উড়তে সে অবশেষে এসে দাঁড়ায় নিজের নিয়তির সামনে। ক্ষুধাই নিয়তি।
আর নবীর ঘুড়িটা? সে আবার উড়তে শুরু করে আবার সেই বিন্দুটা থেকে। কোন বিন্দুটা? জিব্রাইল কী সত্যিই চিঠি পৌছে দেবেন আল্লাহকে? ধর্মের ঈশ্বর কী মেটাবে ছোট্ট নবীর ক্ষুধা? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে পড়তে হবে শাহেদ আলীর জিবরাইলের ডানা।
বলা হয় শাহেদ আলীর গল্পপাঠের মধ্যে দেওয়ান আজরফের দর্শন রয়েছে। মাত্র ছয়টি গল্পগ্রন্থের লেখক শাহেদ আলী। কিন্তু তার গল্পের শিল্পমান প্রশ্নাতীত। নান্দনিকতা বিতর্কের ঊর্ধ্বে। এই গুণী শিল্পীর জন্ম ২৬ মে ১৯২৫ সুনামগঞ্জে। ১৯৪৩ সালে সুনামগঞ্জের সরকারি জুবিলী হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ১৯৪৫ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে ১৯৪৫ সালে আইএ এবং ১৯৪৭ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন।
১৯৪৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি মাসিক প্রভাতী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র সৈনিক-এর সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫১ সালে বগুড়া আজিজুল হক কলেজে শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে রংপুর কারামাইকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ও প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম প্রতিষ্ঠিত মিরপুর বাংলা কলেজে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৪ সালে খেলাফতে রববানী পার্টির ব্যানারে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ পর্যন্ত তিনি আইনসভার সদস্য ছিলেন।
১৯৫৫ সালে দৈনিক বুনিয়াদ-এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালে ইসলামিক একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে অবসর গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা ও মাসিক সবুজ পাতা সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন। ১৯৮০ সালে তিনি মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত সাহিত্য উৎসবে বাংলাদেশ সরকার প্রেরিত একমাত্র সাহিত্যিক হিসেবে মালয়েশিয়া সফর করেন। এই বরেণ্য চিন্তাবিদ ও সাহিত্যিক ২০০১ সালের ৬ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন।