সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার স্থাপন
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং রুম টু রিড বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার স্থাপন করছে। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে তাদের স্বাধীন পাঠক হিসেবে তৈরি করার লক্ষ্যে নেওয়া এই যৌথ পরীক্ষণ প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে নির্বাচিত ১০টি সরকারি বিদ্যালয়ের ৫৯টি শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার।
আজ সোমবার ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনী পাঠাগার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর-এর পরিচালক (পলিসি এবং অপারেশন) মনীষ চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ ফরহাদুল ইসলাম; প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. উত্তম কুমার দাশ ও দিলীপ কুমার বণিক; এবং রুম টু রিড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রাখী সরকার।
`শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার পাইলট’ কার্যক্রমের আওতায় ৭টি বিভাগীয় পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, এবং ৩টি মডেল বিদ্যালয়ে ৫৯টি শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার স্থাপন হবে। মোট ১৫ হাজার ৬০০টি গল্পের বই পড়ার পরিবেশও সমৃদ্ধ করবে। এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বছরে কমপক্ষে ৮টি গল্পের বই পড়ার সুযোগ পাবে। বিদ্যালয়ে নিয়মিত ও কার্যকরভাবে পরিচালিত `পড়ার ঘণ্টা’ কার্যক্রম পড়ার দক্ষতা ও অভ্যাস গঠন করবে।
এছাড়া কমপক্ষে ৬০ জন শিক্ষকের পাঠাগার পরিচালনা দক্ষতা অন্য শিক্ষকদেরও দক্ষতা বাড়াবে। পাশাপাশি, এই পরীক্ষণ বিদ্যালয়গুলোতে প্রতি বছর গড়ে ২৫০ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে বছরে কমপক্ষে ১ হাজার ৭৫০ জন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ পাবেন এবং বিদ্যালয় পর্যায়ে শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহাপরিচালক জনাব শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, রুম টু রিডের শিক্ষা সহযোগিতায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা আছে। আমি আশা করছি, শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় শিখন উপকরণ তৈরিতে অধিদপ্তরের সাথে তারা যৌথ ভাবে কাজ চলমান রাখবে। পাঠাগারগুলো নামমাত্র হস্তান্তর না করে শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের সাথে পরিচালনা কৌশল বিশদভাবে আলোচনা করলে, দেখিয়ে দিয়ে তাদের সক্ষমতা উন্নয়ন করলে উপকার হবে।
মনীষ চাকমা শিক্ষার্থীদের শিখন উপকরণের উন্নয়নে আলোকপাত করে বলেন, কগনিটিভ ডোমেইন বা জ্ঞানভিত্তিক পড়াশুনার উপর সীমিত না থেকে সাইকোমোটর এবং এফেক্টিভ ডোমেইন-ও অন্তর্ভুক্ত করলে শিক্ষার্থীর সার্বিক উন্নতি ঘটবে – এর ফলে সুশিক্ষা নিশ্চিত করে সনদপত্র-সর্বস্ব শিক্ষা এড়ানো যাবে। পাঠাগারে দেওয়া বৈচিত্রপূর্ণ শিক্ষা উপকরণে শিশুদের অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
রুম টু রিড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রাখী সরকার বলেন, প্রাথমিক স্তরে স্বাধীন পাঠক তৈরির লক্ষ্যে পদ্ধতিগত উন্নয়ন প্রয়োজন। আমরা ইতিমধ্যেই সরকারের সামনে তথ্য ও গবেষণলব্ধ উপাত্ত উপস্থাপন করেছি। সরকারি দপ্তর ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন সমন্বিত কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার স্থাপন অন্যতম। ইতিমধ্যেই ডিপিই-এর সহযোগিতায় পাঠাগার ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল তৈরী হয়েছে। আশা করি সকলের সহযোগিতায় পরীক্ষণ প্রচেষ্টা সফল হবে।
`শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার পাইলট’ কার্যক্রমের মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থার উন্নয়ন সহযোগিতার বাইরে নির্ধারিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পঠন দক্ষতা ও পড়ার অভ্যাস গঠনে শ্রেণিকক্ষ পাঠাগারের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুপারভিশন ও পরিবীক্ষণ ব্যবস্থার মধ্যেই পাঠাগার ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা ও শিখন অর্জন সহ পাইলট কার্যক্রমের শিখন থেকে মূলধারায় শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার অন্তর্ভুক্তির পদক্ষেপ নির্ধারণ করা যাবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-৪ এর প্রধান লক্ষ্য হলো, সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ও জীবনব্যাপী শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টি। জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা ২০১০-এর গ্রন্থাগার অধ্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরে সুষ্ঠূ ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বই পড়ার সুযোগ করে দেবে `শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার পাইলট’ কার্যক্রম।