০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:২৭

নানা সংকটে নোবিপ্রবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি

নোবিপ্রবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি  © টিডিসি ফটো

পড়ার জন্য লাইব্রেরিতে গিয়ে মিলছে না আসন, বুকশেলফেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না চাহিদা অনুযায়ী বই। এমনকি নেই পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ব্রাউজিং সুবিধাও। এমনই চিত্র নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে লাইব্রেরি ভবন নামে চার তলা বিশিষ্ট একটি ভবন থাকলেও শুধুমাত্র ভবনের  নিচ তলা এবং ২য় তলার ১ টি রুমে চলছে লাইব্রেরির কার্যক্রম। ফলে শিক্ষার্থীদের ভুগতে হচ্ছে আসন সংকটে। লাইব্রেরি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে লাইব্রেরিতে আসন সংখ্যা মাত্র ১২০ টি। জায়গার অভাবে অল্প জায়গায় অনেক শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে বসছেন। আবার জায়গা না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী ফিরেও যাচ্ছেন।

শুধুমাত্র  আসন সংকটই নয় চাহিদা অনুযায়ী বইও পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল মাহমুদ জানান,  ‘লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা কম। আমাদের কোর্স প্ল্যানের অন্তর্গত অনেক বই-ই লাইব্রেরিতে নেই। আবার কোনো কোনো বই থাকলেও অন্য বিভাগের ক্যাটালগভুক্ত৷ এর ফলে বেশিরভাগ সময় বই খুঁজে পাওয়া না ।’

ফোরকান আমিন নামে অপর এক শিক্ষার্থী জানান, “লাইব্রেরীতে পড়তে আসলে অনেকগুলো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যেমন: আসন সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক সময় আসন খালি না পেলে চলে যেতে হয়। কাঙ্ক্ষিত বইটিও পাওয়া যায় না। আবার মোবাইল এবং ল্যাপটপ চার্জ করার জন্য পর্যাপ্ত চার্জিং পোর্ট নেই।”

এছাড়া, অভিযোগ রয়েছে ইন্টারনেট সুবিধা এবং লাইব্রেরির ব্যবস্থাপনা নিয়েও। সাদীদ আব্দুল হক নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “লাইব্রেরির ওয়াইফাইয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। আবার, জিনসিপত্র আগে টোকেন সিস্টেমে রাখা হত কিন্তু এখন যেমন খুশি তেমন সাজোর মত অবস্থা।  যার ফলে ছাতাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।” 

লাইব্রেরির পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “গ্রন্থাগারে এখন পড়ালেখারও উপযুক্ত পরিবেশ নেই।  কাপল যুগলের আড্ডা, বন্ধু বান্ধবের আড্ডার মহড়া বসে প্রায়ই। পড়ালেখার চাইতে আড্ডা বেশি হয়। পাশাপাশি দরজার শব্দে মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। আবার ছেলেদের টয়লেট ৪ টার মধ্যে ২ টাতেই তালা দেয়া থাকে।  বাকি যে দুইটা আছে সেগুলা কখনও পরিচ্ছন্ন অবস্থায় পাই নি।”

সরেজমিনে দেখা যায়, লাইব্রেরির টোকেন কাউন্টারে টোকেন নেই। এমনকি গেটে নেই কোনো গেট কিপারও। ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার বাহিনীর একজন সদস্যকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের দায়িত্বের মধ্যে এটা পড়ে না। তারপরেও আমরা এ ভবনে আছি হিসেবে যতটুকু পারি চেষ্টা করি। তবে টোকেন কাউন্টারের দায়িত্বে লাইব্রেরি থেকে একজন থাকতো কিন্তু এখন নেই। আর কাউন্টারে লোক না থাকায় টোকেন গুলোও নেই।”

আসন সংকট এবং বই সংকটের বিষয়ে লাইব্রেরিয়ান সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “বর্তমানে আমাদের একটি বড় সমস্যা আসন সংকট। আশা করছি, একাডেমিক ভবন ৩ এর কাজ হয়ে গেলে এবং কিছু ডিপার্টমেন্ট ঐ ভবনে চলে গেলে রুমের সংখ্যা বাড়িয়ে লাইব্রেরিটা সুন্দর করে সাজাতে পারব। আর পরীক্ষার আগে বই সংকট নিয়ে সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। এর সমাধানে আমরা একটা ডাটাবেস তৈরির কাজ করছি। স্টুডেন্টরা লাইব্রেরির কম্পিউটারে বই বা লেখকের নাম সার্চ দিয়ে উপযুক্ত বইটা খুব সহজে খুঁজে পাবে “

ইন্টারনেট স্পিডের বিষয়ে তিনি বলেন, “ওয়াইফাই এর স্পিড বাড়ানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেক্টরে কথা বলেছি এবং ভিসি স্যারের সাথে ও কথা হয়েছে । আশা করছি এটি দ্রুত সমাধান হবে। 

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে লোকবল সংকটই প্রধান বাঁধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেখানে আমাদের ৪০ এর বেশি জনবল প্রয়োজন  সেখানে মাত্র ১৭ জন কর্মকর্তা কর্মচারী আছে। পুরো লাইব্রেরি ভবনের জন্য ক্লিনার মাত্র ২ জন। তার মধ্যে ১ জন এখন গেস্ট হাউসে কাজ করে । এর ফলে পুরো ভবনের ওয়াশরুম টয়লেট পরিষ্কার করা ১ জনের পক্ষে করা অসম্ভব হয়ে যায়।”

শিক্ষার্থীদের জিনিসপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে লাইব্রেরিয়ান বলেন, “আমরা আবার ও টোকেন এর ব্যবস্থা করব। সম্প্রতি গেট কিপারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিন্তু তিনি এখনো এপোয়েন্টমেন্ট লেটার পান নি। এপোয়েন্টমেন্ট লেটার পেলেই তিনি কাজে যোগ দিবেন।”

এছাড়া, বর্তমানে লাইব্রেরিকে ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি RemoteXs Service চালু করা হয়েছে । এর ফলে শিক্ষার্থীরা ১৩,২৯৩ টি ই-বুক  এবং Emerald, JSTOR ওIEEE কর্তৃক প্রকাশিত ই-জার্নালের সুবিধা পাবে।’

উল্লেখ্য, বর্তমানে নোবিপ্রবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে একাডেমিক বই, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই এবং গল্প ও উপন্যাসসহ  প্রায় ২৩৮৯৭ টি বই রয়েছে। এছাড়া, ৬৮৭ টি প্রিন্ট জার্নাল এবং ৮১১ টি ম্যগাজিন রয়েছে।