বিচার পর্যন্ত গড়ায় না বাকৃবির তদন্ত কমিটি
চলতি বছরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ৪টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। প্রতিটি ঘটনার জন্য আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কোনটিই আলোর মুখ দেখেনি। এরমধ্য মাত্র একটি ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও সেটির বিচারও হয়নি। এজন্য প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো। বিচারহীন এ প্রশাসনিক অবকাঠামোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ করছেন অনেকেই।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ০১ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. সুুকুমার সাহা এবং সদস্য সচিব হিসেবে কৃষিতত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম রয়েছেন। কমিটিকে রেজিস্ট্রার বরাবর পরবর্তী ১২ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও ঘটনার চারমাস পরেও কোনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারে নি।
আরও পড়ুন: বিল না দিয়ে ক্যান্টিনে তালা দিল ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগকর্মী
ওই কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা এই তদন্তের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আমাদের হয়ত আর একটি মিটিং প্রয়োজন। দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব বলে আশাবাদী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ছাত্রলীগের দ্বারা সংগঠিত এবছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ছাত্রী লাঞ্ছনা ও ২৮ মার্চ ছাত্রলীগের গাড়ি ভাঙচুর ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে ওই ঘটনায় ২৯ মার্চ ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল হককে সভাপতি ও সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে ওই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ওই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও ২মাসেরও অধিক সময় পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে সক্ষম হন তারা। তবে সেটি এখন পর্যন্ত বিচারের মুখ দেখে নি।
এছাড়া সম্প্রতি ২৭ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরকে অপদস্থ এবং সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকুমার সাহাকে আহবায়ক এবং সহকারী প্রক্টর ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আফরিনা মুস্তারিকে সদস্য সচিব করা হয়। তদন্ত কমিটিকে পরবর্তী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কার্যদিবস অনুযায়ী যেটি শেষ হওয়ার কথা ৮ সেপ্টেম্বর।
ওই ঘটনার এক দিন আগে ২৫ আগস্ট রাতে নূরুল আমিন নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নিরাপত্তাকর্মীকে বেধড়ক মারধর করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। এ ঘটনায় ২৯ আগস্ট ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল হককে সভাপতি ও সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে ওই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি এখনও জমা হয়নি বলে জানা যায়।
ওই তদন্ত কমিটির সভাপতি ড. মো. আশরাফুল হক জানান, ঘটনাটিতে কারা জড়িত তা আমরা বের করতে পারি নি এখনও। আমরা ভুক্তভোগীর সাথে একটি মিটিং করেছি। আরও মিটিং করতে হবে। ঘটনাটি খুব জটিল। ৩ কার্যদিবসের মধ্যে এর প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব ছিল না। আমাদের আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
আরও পড়ুন: সন্ধ্যা হলেই শুরু গাঁজা-ফেনসিডিল সেবন, চলে নারী-পুরুষের মেলামেশা
বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তদন্ত কাজে যারা নিয়োজিত তাদের সবারই ক্লাস, পরীক্ষা, গবেষণা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এগুলোর পাশাপাশি যতটুকু সময় পাওয়া যায় তখন এসব তদন্তের কাজ করতে হয়। তাছাড়া একটি ঘটনার সত্যতা যাচাই বাছাই করে, তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে এবং ভুক্তভোগী ও অপরাধী দুজনের সাথেই কথা বলে আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন তৈরী করতে হয়। এজন্য স্বাভাবিকভাবে হয়ত প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি হয়।
রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, আমার কাছে এ পর্যন্ত ১টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা পড়েছে। প্রতিবেদনটি জমা হওয়ার সাথে সাথেই উপাচার্যের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তি-শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে অধ্যাদেশে উল্লেখ্য শাস্তির বিধান অনুযায়ী এর সুরাহা করবেন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান পারিবারিক সমস্যার কারণে ১ মাসের ছুটিতে গত ২৩ আগস্ট ভারত গমণ করেন। এর আগেও এবছর তিনি প্রায় ৩ মাসের মতো ছুটিতে থাকেন। তার ছুটিকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন।
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বর্তমান উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করছি। যতদূর জানি, আগের ১টি ঘটনার প্রতিবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন আমার দায়িত্বের বাইরে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান ছুটি শেষে আসলে সমস্ত বিষয় তাকে জানানো হবে। পরে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।