বাকৃবিতে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ

শারীরিক-মানসিক সমস্যায় ৮০ ভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী

  © টিডিসি ফটো

শব্দ যখন সহ্যের মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন তাকে বলে শব্দদূষণ। এই শব্দ দূষণের কারণে বর্তমানে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি বাকৃবির এক গবেষণায় এ তথ্যগুলো তুলে ধরেছেন ওই গবেষণার সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুরাদ আহমেদ ফারুখ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা মিলে ওই গবেষণাটি করেন। এতে প্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ ভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাঠে মনোযোগহীনতা, মাথাব্যাথা, শ্রবণশক্তির সমস্যা, উদ্বিগ্নতা, অনিদ্রা, স্নায়বিক সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের (ডিওই) তথ্যমতে বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুল-হাসপাতাল-মসজিদ এলাকায় শব্দের তীব্রতা লেভেলের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মান ৪৫ ডেসিবেল। কিন্তু বাকৃবিতে কয়েকটি এলাকায় শব্দের এই তীব্রতা লেভেল ৮৫-৮৯ ডেসিবেল। যা সহ্য সীমার প্রায় দ্বিগুণ। ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যে পড়ছে  নেতিবাচক প্রভাব। এ কারণে এই এলাকায় বসবাসরতরা ভুগছে নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যায়। বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষকদের পাঠদান কার্যক্রম। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৈনন্দিন কাজেও পড়ছে এর প্রভাব।

গবেষণার প্রধান অধ্যাপক ড. মুরাদ আহমেদ ফারুখ জানান, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দদূষণের মাত্রা নির্ণয়, দূষণের মাত্রা নির্দেশক ম্যাপ তৈরি ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের উপর দূষণের প্রভাব ইত্যাদি বিষয়কে সামনে রেখেই গবেষণাটি চালানো হয়েছে। এই গবেষণায় যুক্ত রয়েছেন স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৬ জন শিক্ষার্থী। এরা হলেন  জাকির হোসাইন, তারিকুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, জুনায়ান রুদ্র, সাজিয়া আফরিন, সাগরিকা সুমি। 

যাদের স্নাতকোত্তর থিসিসের প্রতিপাদ্য বিষয়- বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দদূষণ। এই গবেষণাটি করতে গিয়ে আমরা শব্দদূষণের মাত্রা নির্দেশক ম্যাপ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে জিআইএস এবং আরএস প্রযুক্তি। শব্দদূষণের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ৯ টি এলাকা থেকে ডাটা সংগ্রহ করা হয়। এসব জায়গা থেকে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি ভারী ও মাঝারী মানের যানবাহন চলাচল করে। শব্দ দূষণের মাত্রার ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি রং দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকাকে উক্ত ম্যাপে উপস্থাপন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রেড জোন (৮৫-৮৯ ডেসিবেল) এবং ইয়েলো জোন (৮০-৮৪ ডেসিবেল)।

গবেষক আরো জানান, ম্যাপের রেড জোন এলাকায় রয়েছে- জব্বারের মোড়, কৃষি অনুষদ, প্রশাসনিক ভবন ও কেআর মার্কেট এলাকা। এসব এলাকায় শব্দের তীব্রতা লেভেল ৮৫-৮৯ ডেসিবেল। ম্যাপের ইয়েলো জোন ভুক্ত এলার মধ্যে রয়েছে ভেটেরিনারি অনুষদ, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ, পশুপালন অনুষদ,  কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও জয়নুল আবেদীন মিলনায়তন এলাকা যখানে শব্দের তীব্রতা লেভেল ৮০-৮৪ ডেসিবেল। রেড জোন ভুক্ত এলাকাগুলোতে শব্দের তীব্রতা বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের (ডিওই)  নির্দেশিত মানের দ্বিগুণের কাছাকাছি। অন্যান্য জোনের মানগুলোও মানবদেহের সহনশীল মানের চেয়ে অনেক উপরে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাকৃবির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, গবেষণার তথ্যটি আমি জেনেছি। আসলেই এটি একটি শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়। যে যে কারণে এ দূষণগুলো হচ্ছে সেগুলো এ গবেষণার মাধ্যমে চিহ্নিত আছে। আমরা দ্রুত এ শব্দদূষণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


সর্বশেষ সংবাদ