বছরে ক্ষতি প্রায় ৫০হাজার কোটি টাকা

ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগে নষ্ট হয় ৩০ শতাংশ মাছ

টেকনিক্যাল এসিস্টেন্স টু রিডিউস ফুড লস ইন দ্যা ক্যাপচার ফিসারিজ সাপ্লাই চেইন শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ
টেকনিক্যাল এসিস্টেন্স টু রিডিউস ফুড লস ইন দ্যা ক্যাপচার ফিসারিজ সাপ্লাই চেইন শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ  © সংগৃহীত

দেশে স্বাদুপানি ও সামুদ্রিক উৎস থেকে আহরণ করা মাছের প্রায় ২৭ থেকে ৩০ শতাংশ ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের বাৎসরিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০হাজার কোটি টাকা। সামুদ্রিক ও অভ্যন্তরীণ মৎস্য আহরণ পরবর্তী মাছের লোকসান মূল্যায়ন এবং উভয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতির দিকসমূহ নির্ণয়ের লক্ষ্যে সংগঠিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সহায়তায় বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত একটি প্রকল্পের অংশ হিসাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।

আরও পড়ুন: ঢাবির হলে বিবাহিত ছাত্রীরা থাকতে পারবেন: প্রভোস্ট কমিটি  

বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মিলনায়তনে (বিএআরসি) এ সম্পর্কিত ‘টেকনিক্যাল এসিস্টেন্স টু রিডিউস ফুড লস ইন দ্যা ক্যাপচার ফিসারিজ সাপ্লাই চেইন’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের প্রকাশনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, মাছ ধরার অনুপযুক্ত পদ্ধতি, দুর্বল সরঞ্জাম, অনুপযুক্ত পরিচালনা এবং সংরক্ষণের সুবিধার অভাব সহ দশটি কারণে উৎপাদিত মাছের ৩০ শতাংশ ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনা। নষ্ট হয়ে যাওয়া এই মাছের ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ কাঁচা মাছ। এর ফলে বছর শেষে দেশের আর্থিক ক্ষতি ২০ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়া নষ্ট হওয়া বাকি ১২ শতাংশ প্রক্রিয়াজাতকৃত (শুটকি, নাপ্পি, নোনা ইলিশ ইত্যাদি) মাছ। এর ফলে বাৎসরিক লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এব্যপারে এফএও এর গবেষক অধ্যাপক এ.কে.এম নওশাদ আলম বলেন, ‘শুধুমাত্র অজ্ঞতা, অবহেলার ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে জেলেদের দ্বারা মাছ আরোহণের সময় ৭ থেকে ৮ শতাংশ মাছ নষ্ট হয়ে যায়। আর বাকি মাছ বাজারে নিয়ে যাবার সময় নষ্ট হয় । এটি রোধে জেলেদের মাছ সংরক্ষণ করার বিশেষ ব্যবস্থা সম্বলিত নৌকা সরবরাহ করতে হবে।

আরও পড়ুন: কেউ না খেয়ে থাকে না, এটিই ৫০ বছরের সবচেয়ে বড় অর্জন : কৃষিমন্ত্রী

এছাড়া জেলেদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনাও জরুরী। তাহলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমে আসবে। বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের আওতায় ১২৭৫ জন স্টেকহোল্ডারকে বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। মাছ সংরক্ষণের জন্য ৫৩৬টি বড় আধুনিক বরফের বাক্স, লম্বা দূরত্বে পরিবহনের জন্য ১৬টি বাণিজ্যিক বরফ ট্যাঙ্কসহ ১,৬০৮টি বহুমুখী ক্রেট ও শুটকি সংরক্ষণে ১৭৫ টি বিশেষায়িত পাত্র বিতরণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রাণীজ প্রোটিন গ্রহণের প্রায় ১৭ শতাংশই মাছ থেকে আসে। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদা আগামীদিনে মাছের উৎপাদনকে চ্যালেঞ্জ করবে। এ জন্য দরকার টেকসই মৎস্যসম্পদ যা খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মাছ চাষ থেকে শুরু করে আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন ও বিতরণ পর্যন্ত প্রত্যেক ধাপে মাছের শারীরিক ক্ষতি এ খাতের বড় লোকসান। এতে গুণগতমান হ্রাসের ফলে মাছ কম দামে বিক্রি করতে হয়। মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত প্রচেষ্টা না করে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য আহরণ পরবর্তী মাছের ক্ষতি নিরসনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে।

আরও পড়ুন: গিনেস বুকে নাম লেখালেন বিএম কলেজের সাবেক ছাত্রী

অনুষ্ঠানে এফএও এর প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন বলেন, সরবরাহ শৃঙ্খলের ব্যাঘাতে খাদ্য অপচয় ও বর্জ্য হ্রাস করা এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গবেষণাটিতে ক্ষতির যে অগ্রহণযোগ্য মাত্রা পাওয়া গেছে তা খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, মানুষের জীবিকা ও সেইসাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদের স্থায়িত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অমল কৃষ্ণ মন্ডল। এফএও এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. রবার্ট ডি সিম্পসন সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ