২০ মে ২০২১, ১৪:৩০

বশেমুরকৃবি গবেষণা খামারে ব্যবহৃত ২০ টাকার পাইপের দাম ৫০০ টাকা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়  © ছবি : সংগৃহীত

গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) গবেষণা খামার লাইভস্টক অ্যান্ড পোল্ট্রি ফার্ম নির্মাণে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কয়েক গুণ বেশি দামে কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত বরাদ্দে ৫০ শতাংশের বেশি খরচ হয়ে গেলেও অসম্পূর্ণ নির্মাণকাজটি বিভিন্ন কারণে এখনও ধীরগতিতে চলছে বলে জানা গেছে।

খামার, নার্সারি, ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে পানি দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত চিকন হোসপাইপের প্রতি ফুটের দাম সাধারণত ১৮ থেকে ২০ টাকা। কিন্তু বশেমুরকৃবি গবেষণা খামার লাইভস্টক অ্যান্ড পোল্ট্রি ফার্মের জন্য ওই একই হোসপাইপ কিনতে প্রতি ফুট ১৩৩ টাকা করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তারপর প্রতি ফুট কেনা হয়েছে ৫০০ টাকা করে।

সূত্রে জানা গেছে, শুধু হোসপাইপই নয়, এই খামারের জন্য সিমেনস ফ্রিজার, মিল্ক প্যাকেজিং মেশিন, প্রেগন্যান্সি ডিটেক্টর, ক্রিম সেপারেটরসহ নানা সরঞ্জাম কেনা হয়েছে কয়েক গুণ বেশি দামে। এত কিছুর পরও এখনো ফার্মটি চালু হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রক্রিয়া থেমে গেলেও একটি ইনস্টিটিউটের জন্যই কেনা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার মালপত্র। ইনস্টিটিউট না হলে এগুলো কী কাজে লাগবে, তা জানে না কেউ।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে প্রায় ৩৭৫ কোটি টাকার তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের হিসাবেই ২০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়ে গেলেও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়া বলেন, লাইভস্টক অ্যান্ড পোল্ট্রি ফার্মে কত টাকার জিনিসপত্র কেনা হয়েছে, তা কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। তিনি বলেন, ‘একটি ইনস্টিটিউটের জন্য আমরা কিছু যন্ত্রপাতি কিনেছিলাম। কিন্তু ইনস্টিটিউট না হলেও সেই যন্ত্রপাতি সেন্ট্রাল ল্যাবে কাজে লাগছে। যেহেতু জিনিসপত্র কেনার একটা সময়সীমা থাকে, সে জন্যই আমরা কিনেছি। আমাদের গবেষকরা সেই যন্ত্রপাতি দিয়ে নিয়মিতই গবেষণাকাজ চালাচ্ছেন। আর এ জন্যই তো আমরা র‍্যাংকিংয়ে দেশসেরা হতে পেরেছি।’

উপাচার্য আরো বলেন, ‘ভিসি হিসেবে আমার চার বছরের মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হবে। সরকার আমাকে দ্বিতীয় মেয়াদে রাখার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে। আর এ জন্যই কিছু শিক্ষক, যারা নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন না তারা নানা ধরনের কথা বলছেন। আপনাদেরও (সাংবাদিক) বলতে পারেন। তবে আমি শতভাগ স্বচ্ছ আছি। আপনারা (সাংবাদিক) বিশ্ববিদ্যালয়ে আসুন, আমি সব কাগজপত্র আপনাদের দেখাব।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিকল্পনার ৬৫ শতাংশ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে বলে জানান উপাচার্য।

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তিন বছর মেয়াদের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করতে পারিনি। যৌক্তিক কারণেই মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আনুমানিক ২০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে কাজে এখন ধীরগতি।’

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইভস্টক অ্যান্ড পোল্ট্রি ফার্মের হোসপাইপ কেনার জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যাদেশে দেখা যায়, এক হাজার ৫০০ ফুট হোসপাইপ কেনার জন্য প্রতি ফুট ৫০০ টাকা হিসাবে সাত লাখ ৫০ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। সিমেনস ফ্রিজারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা বাড়িয়ে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ক্রিম সেপারেটরের দাম দেড় লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে দুই লাখ টাকা। এভাবে সকল সরঞ্জামাদির দাম কয়েকগুণ বেশি দিয়ে কেনা হয়েছে উল্লেখ আছে।

প্রকল্পটির অধীনে ‘ইনস্টিটিউট অব ফুড সেফটি অ্যান্ড প্রসেসিং’ ও ‘ইনস্টিটিউট অব ক্লাইমেট চেঞ্জ’ নামে দুটি ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রস্তাব করা হয় এবং এসংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স তৈরির উদ্দেশ্যে একাডেমিক কাউন্সিল কমিটিও গঠন করা হয়। বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রক্রিয়া থেমে গেলেও কেনা হয়েছে কোটি কোটি টাকা দামের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র।

আরও পড়ুন

বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন একটি সয়াবিন জাত উদ্ভাবন

প্রকল্প প্রস্তুতকালে যেসব বিশেষজ্ঞ শিক্ষক এই ইনস্টিটিউটের প্রস্তাব তৈরি করেছেন, যন্ত্রপাতি কেনার সময় তাদের কাউকে রাখা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুধু ইনস্টিটিউট অব ফুড সেফটি অ্যান্ড প্রসেসিংয়ের নামেই ২০১৮ সালে একটি কার্যাদেশের মাধ্যমে কেনা হয়েছে চার কোটি ৫৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকার সরঞ্জাম।

জানা যায়, ৩৭৫ কোটি টাকার ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত সুবিধাদি ও গবেষণা সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয় ২০১৭ সালে। এই প্রকল্পেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ তোফায়েল আহমেদকে পরিচালকের (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অতিরিক্ত দায়িত্বে রাখা হয়। ফলে একই ব্যক্তি পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) হিসেবে টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি করছেন, প্রাপ্ত টেন্ডার মূল্যায়ন করছেন আবার তিনিই কোষাধ্যক্ষ হিসেবে বৃহৎ ও স্বল্প মূল্যের ক্রয় কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে কাকে কাজ দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সরকার আমাকে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্ব দেওয়ায় তা আমি পালন করেছি মাত্র। তবে এখন আর আমি এই দায়িত্বে নেই।’