নিয়োগ পেয়ে সবার সহযোগিতা চাইলেন শেকৃবির নবনিযুক্ত ভিসি

  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া। তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক।

আজ মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০১ এর ১০ (১) ধারা মোতাবেক আগামী চার বছরের জন্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূইঁয়াকে ১৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখ হতে পরবর্তী ৪ বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন। যোগদানের দিন থেকে তার এ নিয়োগ কার্যকর হবে।

আদেশে আরও বলা হয়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক অবস্থান করবেন। উপাচার্য হিসেবে তিনি তার বর্তমান পদসংশ্লিষ্ট বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন। রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে নির্ধারিত সময়কালের আগে তার নিয়োগের আদেশ বাতিল করতে পারবেন।

নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠ পরিবেশ রক্ষা এবং ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে যাবো। ছাত্র, শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অধিকার সুরক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিকসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড আরো গতিশীল করতে সকলের সহযোগিতা চান তিনি।

২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট এগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদকে চার বছরের জন্য প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ওই পদে ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক প্রয়োজনে অর্ন্তর্বতীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিমকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া একজন প্রথিতযশা গবেষক, উদ্ভাবক, লেখক ও পেশাজীবি সংগঠক। বতর্মানে কৃষিবিদদের পেশাজীবী সংগঠন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি ১৯৫৬ সালে পহেলা জুলাই নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার রায়ের গাঁও জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবদুর রশীদ ভূইয়া এবং মাতা সুফিয়া খাতুন। ১৯৮০ সালে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (প্রথম শ্রেণিতে চর্তুথ) এবং ১৯৮২ সালে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিষয়ে স্নাতকোত্তর (প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয়) ডিগ্রী অর্জন করেন।

১৯৯২ সালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ওয়েলস থেকে উদ্বিদ প্রজননে দ্বিতীয়বার স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন এবং ২০০২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজননের জীব প্রযুক্তি বিষয়ের উপর পি-এইচ.ডি (জিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩.৯৪) ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট বর্তমানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন।

অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া কৃষি গবেষণায় অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণপ্রদক’ -২০১৭ অর্জন করেন। ২০১৫ সনে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ কৃষি প্রকাশনার মাধ্যমে কৃষি শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং কৃষির বিভিন্ন বিষয়ে সচেনতা সৃষ্টি ও কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিতকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখায় তাঁকে “কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ কৃষি পদক ২০১৫” প্রদান করে। বাংলাদেশ একাডেমী অব এগ্রিকালচার পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে ড. ভূঁইয়াকে “ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা ট্রাস্ট ফান্ড গোল্ড মেডেল” প্রদান করা হয়। ২০১৩ সনে বাংলাদেশ কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন সমিতির পক্ষ থেকে প্ল্যান্ট ব্রিডিং-এর ক্ষেত্রে সামগ্রিক অবদান রাখার জন্য “প্ল্যান্ট ব্রিডিং অ্যাওয়ার্ড” অর্জন করেন।

রাজনীতিক জীবনেও এই অধ্যাপকের রয়েছে অবাধ বিচরণ। তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির অন্যতম আদর্শিক শিক্ষক হিসেবে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সংগ্রাম ও লড়াইয়ে অংশ গ্রহন করেন। তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সদস্য, ডীন, পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষক, শিক্ষক ও বিজ্ঞানী নিয়োগ বোর্ড বিশেষজ্ঞসহ নানাবিধ একাডেমিক ও গবেষণামুলক কার্যক্রমে জড়িত রয়েছেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি ১৯৯০ সন থেকে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি তিনি কৃষি ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন এবং টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন আলোচনামূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকেন।

অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া মূলত একজন প্ল্যান্ট ব্রিডার। সরিষা নিয়ে তিনি গত বিশ বছর ধরে গবেষণা করে আসছেন। তাঁর গবেষণার ফলশ্রুতিতে এসএইউ সরিষা-১ (২০০৬), এসএইউ সরিষা-২ (২০০৮) এবং এসএইউ সরিষা-৩ (২০১৪) নামে তিনটি সরিষা জাত উদ্ভাবন করেছেন যা কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক যথারীতি নিবন্ধিত হয়েছে এবং কৃষকের নিকট চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে। গত দশ বছর ধরে তিনি ধান উন্নয়ন গবেষণাও চালিয়ে যাচ্ছেন।

দেশে প্রথম উদ্ভিদ প্রজনন বিষয়ের ওপর একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনা করেন, যা বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৯২ সনে প্রকাশিত হয়। তিনি ফসল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নানা বিষয় নিয়ে মোট ২৬টি গ্রন্থের লেখক। তাঁর প্রকাশিত জনপ্রিয় বিজ্ঞান ও কৃষি বিষয়ক বিজ্ঞান প্রবন্ধের সংখ্যা ২০০ও অধিক। ফসলের বিবর্তন, জিন সম্পদ, ফসলের স্থানীয় জাত, ফসল প্রযুক্তি, ফসল উন্নয়ন কৌশল, হাইব্রিড জাত, জিএমও, খাদ্য ও পুষ্টি, ফুলের নান্দনিক প্রসঙ্গ, ফল, জীবপ্রযুক্তি, জীন প্রকৌশল, কৃষি জীববৈচিত্র্য মেধাস্বত্ব এসব বিষয়ে তার লেখালেখি সবচেয়ে বেশি।


সর্বশেষ সংবাদ