ভিসির দায়িত্বে রেজিস্ট্রার, মেনে নিতে পারছেন না শিক্ষকরা

শেখ রেজাউল করিম ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
শেখ রেজাউল করিম ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্যের পদ শূন্য হওয়ায় রুটিন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিমকে। তবে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্ব দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অবিলম্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছেন তারা

গতকাল সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. ফরিদা ইয়াসমীন বারি ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. এনামুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।

বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছেন, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী। একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাতে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেয়ায় বাকৃবি শিক্ষক সমিতি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একই সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দ্রুত এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে একজন স্বনামধন্য প্রফেসরকে ভিসির দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানান তারা।

এর আগে গত রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক আদেশে শেখ রেজাউল করিমকে শেকৃবির চলতি ভিসির দায়িত্ব দেয়া হয়। আদেশে বলা হয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক প্রয়োজনে অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন।

ঢাবি অধ্যাপকের প্রতিবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রেজিস্ট্রারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির চলতি দায়িত্ব দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন রেজিস্ট্রারকে উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়ে প্রমাণ করলো যে, যতদিন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে ততদিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভবিষ্যত নাই।

একজন রেজিস্ট্রারকে রাজধানীর একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দিয়ে আমাদের মন্ত্রণালয় প্রমান করেছে তারা আসলে বিশ্ববিদ্যালয় কি সেই জিনিসটাই ধারণ করতে পারে না। পারবে কীভাবে? সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা অধ্যাপক হন তাদের ন্যূনতম যোগ্যতা হলো পিএইচডি প্লাস পোস্ট-ডকই না অনেক মাস্টার্স ও পিএইচডি ছাত্রছাত্রী supervise করার অভিজ্ঞতা (অর্থাৎ গবেষণার অভিজ্ঞতা)! এর আগে আমি এও বলেছি বাংলাদেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাও ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় কি’’ তা তাদের ধারণাতে ধারণ করার জন্য যেই প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দরকার সেটি নেই। কারণ যারা তাদের নিয়োগ দেয় তাদেরই যদি ধারণা না থাকে তারা কিভাবে সঠিক মানুষকে খুঁজে পাবে?

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একজন শিক্ষক পিএইচডি করে আসলে তার সেই লব্ধ অতিরিক্ত জ্ঞান ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করে তার জ্ঞানকে প্রজ্ঞায় পরিণত করবে। সময়ের সাথে অভিজ্ঞ হবে। কিন্তু এরাতো সেই সময় পায়নি। বিদেশ থেকে পিএইচডি শেষে এসেই বিশাল দায়িত্ব। সেতো শিক্ষকই হতে পারার সময় পেল না বা তাকে সেই সময় দেওয়া হলো না। একেতো দেশে পাইকারি হারে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হচ্ছে। আর একই সাথে সেইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যেনতেন মানুষদের ভিসি প্রোভিসি বানানো হচ্ছে।