আমন্ত্রণ পাননি অভিযোগে ছাত্রলীগের তাণ্ডব, বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর
অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ পাননি—এমন অভিযোগ কৃষি দিবস ও নবান্ন উৎসবের আয়োজনে তাণ্ডব চালান রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম মাসুদুর রহমান মিঠুর অনুসারীরা। তাদের তাণ্ডবের মুখেই পণ্ড হয়ে যায় ঐতিহ্যের ধারক অনুষ্ঠানটি। এ সময় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছনারও ঘটনা ঘটে।
কৃষি দিবস ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই উৎসবমুখর ছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ওয়াই-ফাই জোন। তবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবার আগেই শেকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম মাসুদুর রহমান মিঠুর অনুসারীদের বাধায় সেটি পণ্ড হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কৃষি দিবস ও নবান্ন উৎসব উদযাপনে শুক্রবার বিকাল থেকে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। এরপর চলছিল আলোচনা সভা। মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শেকৃবি ভিসি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন শেকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান মিজান।
এদিকে, অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের স্টলে কর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে শেকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম মাসুদুর রহমান মিঠুর অনুসারীরা নবান্ন উৎসবের ছাত্রলীগের স্টল ভাঙচুর করে। এসময় স্টলে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভেঙে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপস্থিত শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আসে।
বক্তব্য শেষে উপাচার্য নবান্ন উৎসবে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের স্টল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষ হতে না হতেই দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মেলা চত্বরে হাজির হন ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম মাসুদুর রহমান মিঠু। এসময় মিঠু ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো.মিজানুর রহমানের ওপর চড়াও হন এবং জানতে চান তাকে না জানিয়ে এবং তার অনুপস্থিতিতে কেন অনুষ্ঠান করার হলো। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ত্রিমুখী উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। উত্তেজনার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এসময় অনুষ্ঠানে চেয়ার ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষক আঘাতপ্রাপ্ত হন। ফলে তৎক্ষণাৎ অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে স্টলগুলো সন্ধ্যে পর্যন্ত খোলা ছিল।
ছাত্রলীগের সভাপতি না জানানোর ব্যাপারে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, তাকে অফিসিয়ালি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ফোন করে বৃহঃস্পতিবার রাতেও তাকে জানিয়েছি। এরপরও এমন আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত।
শেকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজান বলেন, এটি ছাত্রলীগের দু পক্ষের কোন ঝামেলা না। সভাপতির সাথে প্রশাসনের ভুল বুঝাবুঝির কারণে এমন হয়ে থাকতে পারে। তবে ছাত্রলীগের স্টলসহ বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য শেকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মিঠুকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন কেটে দেন। মোবাইলে এসএমএস করলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।