১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:২১

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় শিক্ষককে মারধর, ককটেল বিস্ফোরণ

  © ফাইল ফটো

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আবাসিক এলাকায় এক শিক্ষকের ওপর অতর্কিত হামলা এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় শিক্ষকদের মাঝে নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রিজওয়ানুল হককে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন সড়কে মারধর করে দুর্বৃত্তরা। পরে ওই শিক্ষক ও ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক আফরিনা মুস্তারীর বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

একই রাতে কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল আলমের বাসায়ও ভাঙচুর চালানো হয় বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আফরিনা মুস্তারী। ঘটনার সময় নিরাপত্তা কর্মীদের অনুপস্থিতি ও ঘটনা পরবর্তী সময়ে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই শিক্ষকদের ওপর এরকম হামলা এবং সেটির বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো সক্রিয় পদক্ষেপ না নেওয়াকে প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা হিসেবেই উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকবৃন্দ।

ভুক্তভোগী শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রিজওয়ানুল হক বলেন, গতকাল রাত সাড়ে দশটার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব থেকে বাসায় ফিরছিলাম। ঠিক সেই সময় একটি মোটরসাইকেলে তিনজন দুর্বৃত্ত আমার পিছু নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। মোটরসাইকেল থেকে নেমে দৌঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তারা আমাকে আবারও আক্রমণ করে। তারা আমাকে এলোপাথাড়ি লাথি দেয় এবং হাতের মুঠিতে কিছু একটা রেখে ঘুসি দিতে থাকে। মাথায় হাত দিয়ে ঢেকে রাখার কারণে বড় কোনো বিপদ হয়নি। হামলার পর তারা আমার বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি আমার বাসাতেই উপস্থিত ছিল।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় নিরাপত্তা কর্মীদের দেখা মেলেনি। প্রক্টরিয়াল বডিকে জানিয়েও আমি কোনো তদন্ত বা বিচার পাওয়ার আশ্বাস পাইনি। গতকাল যদি আমাকে গুলি করত, তাহলেও হয়তো কেউ নিরাপত্তা দিতে আসতো না। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা।

ভুক্তভোগী অধ্যাপক আফরিনা মুস্তারী বলেন, গতকাল রাত ১টার দিকে আমার বাসার সামনে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে করে এসে ককটেল বিস্ফোরণ করে চলে যায়। গভীর রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার ভেতরে ককটেল নিয়ে কেউ কিভাবে অবাধে চলে আসতে পারে সেটাই আমার বোধগম্য হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীদের তাহলে কাজটা কি? এতরাতে আবাসিক এলাকার ভেতরে কেউ আসলে তাকে অবশ্যই তল্লাশি করে তারপরে অনুমতি দিতে হবে।

ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক মো. আব্দুল আলীম বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা কম থাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যদের সঙ্গে শহর থেকে কোতোয়ালী থানার আরও দুই গাড়ি পুলিশ ডেকে আনা হয়। তারা রাত দুইটা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে থেকে তদন্ত চালিয়েছে। আজ সারাদিন আমরা প্রক্টর অফিস এবং পুলিশ ক্যাম্পের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মিটিং করেছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা সঠিকভাবে তদন্ত করে বের করা। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে।