রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে ফের সক্রিয় ছাত্র ফ্রন্ট, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) নতুন ব্যানারের আড়ালে রাজনীতি শুরুর চেষ্টা করছেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বাকৃবি শাখার নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক কার্যক্রম ফের শুরু করার চেষ্টা হিসেবে ‘জুলাই স্মৃতি পরিষদ’ নামের একটি নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করেছেন তারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও নতুন সংগঠনের আড়ালে ফের রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, শিক্ষার্থীদের চাপে গত ২৮ আগস্ট শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বাকৃবি প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং সব ছাত্রসংগঠনের কার্যালয় বন্ধ করে দেয়। তবে সে সিদ্ধান্তের পরও ক্যাম্পাসে নতুন ব্যানারের আড়ালে নিজেদের সক্রিয়তা ধরে রাখার কৌশল নিয়েছে ছাত্র ফ্রন্ট ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে বাকৃবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। তাদের কার্যালয় বন্ধ থাকলেও টিএসসিকেন্দ্রিক কার্যক্রমে তারা প্রকাশ্যে সরব ছিল। গত শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) জুলাই স্মৃতি পরিষদ সংগঠনের আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে তারা কার্যত নতুন মোড়কে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে । ২৫ সদস্যবিশিষ্ট নতুন সংগঠনের বেশির ভাগই ছাত্র ফ্রন্টের পদপ্রাপ্ত কর্মী।
আরও পড়ুন: বাকৃবি ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মিথিলা, সম্পাদক সজীব
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন সংগঠন জুলাই স্মৃতি পরিষদের সভাপতি মনোনীত হয়েছেন বাকৃবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক জায়েদ হাসান ওয়ালিদ এবং সদস্যচিব হয়েছেন ছাত্র ফ্রন্টের গ্রন্থাগারবিষয়ক সম্পাদক পুষ্পিতা ভট্টাচার্য। সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য মাহমুদুল হাসান রাজু। এ ছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন ছাত্র ফ্রন্টের অঙ্গসংগঠন বাকৃবির বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্রের সহসভাপতি মাশরুল আহসান, বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্রের সদস্য সানজিদা আক্তার ও দপ্তর সম্পাদক মো সোহান সিকদার। সংগঠনটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাকৃবির বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্রের অর্থ সম্পাদক ইয়াছিনুর রহমান ইন্না ও মেহেদী হাসান।
এদিকে নতুন সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই? শীর্ষক একটি ছাত্র-শিক্ষক সংলাপের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধিকে নেওয়া হয়নি এবং নামমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া আন্দোলনের সময় পাশে থাকা শিক্ষক ছাত্রদের না রাখায় শিক্ষার্থীদের মধ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আল সাউদ সৌহার্দ্য বলেন, ‘আমি ওই অনুষ্ঠানের প্রথম ২০ মিনিট ছিলাম। পরে দেখি, সাধারণ শিক্ষার্থী কেউ নেই। সব বাম রাজনীতির দলের কর্মীরা। পরে বুঝলাম, এখানে বামভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা নতুন সংগঠন খুলেছেন। যার মূল কাজ আগের মতোই, কিন্তু নাম নতুন।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস
উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, জুলাই স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে ‘কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই?’ শীর্ষক অনুষ্ঠান হয়েছে, যেখানে বাকৃবির প্রশাসনের কোনো শিক্ষককে রাখা হয়নি; বরং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এনে অনুষ্ঠান করা হয়েছে, যা সন্দেহজনক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পূর্বপরিচয় দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এটা মূলত রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে অরাজনৈতিক ব্যানারে বাম সংগঠনের সাবেক নেতা-কর্মীদের নতুন পরিচয়ে রাজনীতি শুরু করার একটা প্রয়াস।
তিনি আরও বলেন, ‘বাকৃবি ক্যাম্পাসের অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন জায়গায় জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে অথচ তাদের বাদ দিয়ে গঠিত জুলাই স্মৃতি পরিষদ এটি ছিল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। যা জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ ছাড়া এসব ব্যক্তির মধ্যে অনেকেই ৫ আগস্ট হঠাৎ লাইভে এসে নিজেদের স্বঘোষিত সমন্বয়ক দাবি করে, যা পরবর্তী সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।’
এ বিষয়ে নতুন সংগঠন জুলাই স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ও বাকৃবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক জায়েদ হাসান ওয়ালিদ বলেন, ‘জুলাইয়ের স্মৃতি ধারণ করে রাখার জন্য সবাই মিলে যোগাযোগ করেছি। কমিটিতে প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ সেখানে ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য হওয়া প্রশ্নটাই বৈধ নয়। জুলাই স্মৃতি সচল রাখার জন্য শিক্ষার্থীরা যে কেউ একটি সংগঠন খুলতেই পারে।’
আরও পড়ুন: কৃষি গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব: বাকৃবি উপাচার্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আমরা জুলাই স্মৃতি পরিষদ সংগঠনটির অনুমতি দেয়নি। যদি অননুমোদিত সংগঠন হয়ে থাকে তাহলে প্রশাসন তার নিজস্ব আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আমরা তাদের সংগঠন খুলতে নিষেধ করেছিলাম। তারা আমাদের অনুরোধ রাখেনি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, “আমরা তাদের ‘কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই?’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি করার অনুমতি দিয়েছি। তবে জুলাই স্মৃতি পরিষদ সংগঠনটির আত্মপ্রকাশের অনুমতি দেয়নি। তারা জুলাই স্মৃতি পরিষদের ব্যানারে যে অনুষ্ঠানটি করেছে, সেটি করা ঠিক হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতির বাইরে গিয়ে তারা এ কাজ করেছে ৷ আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত অনুমতি না দেব, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি বৈধ হবে না।’