বন্ধ ক্যাম্পাসে সাংবাদিক সংগঠন খুলে ফেসবুকে প্রচার, নেওয়া হয়নি অনুমতি
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদিত সাংবাদিকদের সংগঠন বাকৃবি সাংবাদিক সমিতি (বাকৃবিসাস)। ক্যাম্পাসে অনুমোদিত সাংবাদিকদের সংগঠন থাকলেও নতুন করে প্রেসক্লাব নামে একটি সংগঠন খুলে ফেসবুকে প্রচার করছেন এক শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে বন্ধ ক্যাম্পাসে ওই শিক্ষক কিছু বিতর্কিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ সংগঠন খুলেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বাকৃবি প্রেসক্লাব নামে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করার পর বিষয়টি প্রথম নজরে আসে। এতে প্রশাসনের অনুমোদনের কোনো সিল-স্বাক্ষর দেখা যায়নি। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ছাত্রবিষয়ক বিভাগ কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
জানা যায়, কমিটিতে সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন সবুজ বাংলাদেশ ২৪ ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক ড. মো. সহিদুজ্জামান সবুজ। তিনি একইসঙ্গে এ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ও অনুমোদনহীন নবগঠিত প্রেসক্লাবের সভাপতি। একইসঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারাসাইটোলজি বিভাগেরও অধ্যাপক। তিনি ক্যাম্পাসে বিএনপিপন্থি শিক্ষক বলে পরিচিত।
অনুমোদনহীন প্রেসক্লাবের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম এসেছে দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রায়হান আবিদের। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির-২০২৩ কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অসদাচরণের কারণে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বহিষ্কৃত হন। এছাড়া কমিটির সহ-সভাপতি জাহিদ হাসান বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ২০২১ সালে। পরে ২০২২ সালে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তারও সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়।
অভিযোগের বিষয়ে বিএনপিপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান সবুজ বলেন, ‘গঠনতন্ত্রসহ একটি আবেদন ছাত্রবিষয়ক বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তো শিক্ষকরা সাংবাদিকতার সাথে জড়িত থাকেন। বিষয়টাকে এভাবে দেখতে পারেন যে, অনেক সায়েন্টিফিক জার্নালেও শিক্ষকরা কাজ করেন, তেমনি এটা একটা নিউজ জার্নাল। এখানে আইনের কোনো জটিলতা নেই।’ এছাড়া সংগঠনের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের উপ-পরিচালক দীন মোহাম্মদ দীনু বলেন, ‘আমার দপ্তর এ বিষয়ে কিছু জানে না। আমরা কোনো কাগজও হাতে পাইনি। এখন তো ক্যাম্পাস বন্ধ। ভিসি স্যারও হজে আছেন। অনুমতি ছাড়া কীভাবে ক্যাম্পাসের নাম-লোগো ব্যবহার করে একটি সংগঠন খোলা যায়, বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, আমরা এখনও এ বিষয়ে অবগত নই। তারা কোনো কাগজ ছাত্রবিষয়ক বিভাগে জমা দিয়েছে কি না, সেটিও আমার জানা নেই। আর জমা যদি দিয়েও থাকে, সেটা তো আর অনুমতি দেওয়া হয়নি। আর আমি চাইলেই কি অনুমতি দিতে পারবো নাকি? ভিসি স্যার ছাড়া অনুমতি দেওয়া যাবে না। এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, বিশ্ববিদ্যালয় খুললে এবং ভিসি স্যার হজ থেকে আসলে আমরা এটি নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।
শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে অনুমতি দেওয়ার কথা না। অনেক শিক্ষকই বুঝে না এটি, না বুঝেই থাকে সাপোর্ট দেয়। কেউ কিছু বলেও না।
বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী হজে থাকায় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. আব্দুল আউয়াল বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তারা কোনো প্রস্তাবও আমাদের দেয়নি। ব্যক্তিগতভাবেও কেউ এ বিষয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেননি। এ বিষয়ে উপাচার্য স্যারের অনুমতি ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই।