হাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে মন্দির স্থাপন নিয়ে মুখোমুখি শিক্ষার্থী-প্রশাসন
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে মন্দির স্থাপন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও একদল সাধারণ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তাদের অনুমতি ছাড়াই কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জায়গায় মন্দির স্থাপনের প্রচেষ্টা চালায়। তারা এ বিষয়টিকে অবৈধভাবে ও বেআইনিভাবে একটি স্থান দখলের পাঁয়তারা হিসেবে গণ্য করছে।
আর শিক্ষার্থীরা বলছে, মন্দির বাস্তবায়নের আশ্বাস প্রদান করলেও সেই কাজের ন্যূনতম অগ্রগতি না হওয়ায় প্রতিবাদ স্বরূপ দাবিকৃত জায়গায় ভূমিপূজা সম্পন্ন করা হয়েছে।
জানা যায়, বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল মাঠে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়। পূজা চলাকালীন সময়ে পূজায় অংশ নেওয়া একদল শিক্ষার্থী পূজাস্থল থেকে মন্দির স্থাপনের জন্য মাইকে ঘোষণা দেয়। এরপর কয়েকজন শিক্ষার্থী বাঁশ, লাল ও গেরুয়া রঙের পতাকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে স্থাপিত হাবিপ্রবি স্কুলের দক্ষিণ দিক, বঙ্গবন্ধু ও জিয়া হল সংলগ্ন মাঠের উত্তর পাশের স্থানটিতে বাঁশের খুঁটি ও পতাকা স্থাপন করে। এর ঠিক পশ্চিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের গবেষণা পুকুর রয়েছে।
এসময় উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। পরে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা জানান, জাতীয় নির্বাচন পরবর্তীতে হাবিপ্রবি প্রশাসন মন্দির বাস্তবায়নের আশ্বাস প্রদান করলেও সেই কাজের ন্যূনতম অগ্রগতি না হওয়ায় সরস্বতী পূজা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার পর প্রতিবাদ স্বরূপ দাবিকৃত জায়গায় ভূমিপূজা সম্পন্ন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লানিং, ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়ার্কস শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. এ.টি.এম. শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই স্থানটিতে মাস্টার প্লানে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। তাদের ওই স্থান ব্যবহারের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারা নিজেরা এই কাজ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহাবুব হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসের কোনো স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যানিং শাখার পরিকল্পনা ছাড়া কোনো স্থাপনা করা আইনসিদ্ধ নয়। আমরা তাদেরকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও ডরমিটরি-২ হলের নিচতলায় রিডিং রুম আছে। তাছাড়া বেশি রাত পর্যন্ত মন্দিরে ধর্মীয় কার্যক্রম চললে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটবে। মাঠের পাশেই এই স্থাপনা হলে খেলার সময় বল গিয়ে পরবে সেখানে, যা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বিনষ্ট ও বিশৃঙ্খলতার সৃষ্টি করবে এমন আশঙ্কায় ইতোমধ্যে দুই হলের শিক্ষার্থীরা মৌখিক অভিযোগ করেছে বলেও জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মামুনুর রশীদ বলেন, ক্যাম্পাসের ওই স্থানে মন্দির নির্মাণের কোনো অনুমতি নেই। তারা জোরপূর্বক নির্মাণের চেষ্টা করছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ।
কোন শিক্ষার্থী বা সংগঠন চাইলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া যত্রতত্র মসজিদ, মন্দির, কিংবা ক্লাবের জন্য জায়গা নির্ধারণ বা স্থাপনা নির্মাণের এখতিয়ার নেই বলে তিনি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা উদ্যাপন কমিটির সদস্য ও সাবেক ট্রেজারার এবং কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে সভা করবো। এরপর আপনাদেরকে জানাবো।