১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪০

অহিদা-রিয়াদের ১১ বছরের প্রেমের গল্প ক্যাম্পাসে সবার মুখে মুখে

অহিদা-রিয়াদ  © টিডিসি ফটো

প্রথমে তাদের সম্পর্ক ছিল ক্যাম্পাসের সিনিয়র-জুনিয়র। ছেলেটির সেশন ছিল ২০০৯-১০ আর মেয়েটির সেশন ছিল ২০১২-১৩। কেউ কাউকে কোনো প্রোপোজ ছাড়াই এক সময় এক হয়ে যান। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আগামী ২০ মার্চ ১১ বছরে পা দেবে তাদের প্রেম-ভালোবাসার গল্প।

১১ বছরের সম্পর্কে রয়েছে তিক্ত-মধুর নানান অভিজ্ঞতা। ভুল বুঝাবুঝি, মান-অভিমান এবং রাগ সব কিছুই ছিল। তবে কোনোদিন কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে এমন হয়নি। ১১ বছরের দীর্ঘপথ অতিক্রমে দুজন দুজনের পাশে ছিল ইস্পাতের মতোই। তাই তো ১২০০ একরের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে তাদের প্রেম-ভালোবাসা গল্প যেন সবার মুখে মুখে।

বলছিলাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ এবং মেরিন ফিশারিজ সায়েন্স বিভাগের প্রভাষক উম্মে অহিদা রহমানের ভালোলাগা ভালোবাসার নানা গল্প। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে থাকছে তাদের ১১ বছরের মায়ার বন্ধনের গল্প।

ছাত্রলীগ সভাপতি তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, সেই ২০১৩ সালে থেকে আমাদের গল্পটা শুরু। আমাদের পরিচয়টা হয় অনেকটা সিনেমার মতই। কৃষি অনুষদের ভিপি থাকার সুবাদে ক্যাম্পাসের এক ছেলের অতি বিরক্তে অতিষ্ঠ হয়ে নালিশ জানায় আমার কাছে। সেই থেকে পরিচয় হয় আমাদের। প্রথম দিকে আমি তাকে চিনলেও সে আমাকে চিনতো না।

তিনি বলেন, আমি আমার হলের জুনিয়রদেরকে বলে রেখেছিলাম যে সে কোথায়, কখন যায় একটু অনুসরণ করিস। আর আমাকে একটু জানাস। পরে আমি মজা করে বলতাম যে তুমি কি আজকে অমুক ড্রেস পরে কে.আর এ এসেছিলে, আজকের মিলন হোটেলে এই সময়ে ছিলা। এগুলো শুনে সে ভাবতো যে তাকে আমি অনুসরণ করি। কিন্তু আমি যে জুনিয়রদের থেকে শুনে বলি এটা সে বুঝতে পারতো না।

‘‘এগুলো নিয়ে সে বলতো যে আপনি আমাকে ফলো করেন অথচ আমি আপনাকে এখনো চিনি না। এখন আপনি যদি দেখা না করেন তাহলে আপনার সাথে আর কথাই বলবো না। এভাবে পরে আমিও তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম কিন্তু সে বুঝতো না।’’

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ২০ মার্চে আমাদের প্রথম দেখা হয়। প্রথম দিনে ক্যাম্পাসের বড় ভাইয়ের মত খোঁজ খবর নিলাম। বাসায় কোনো সমস্যা আছে কিনা? হলে কোনো অসুবিধা আছে কি না? জিজ্ঞেস করলে সে বললো সমস্যা নাই। তো প্রথম দিন প্রেম, ভালোবাসা বা প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া—এমন কিছুই হয়নি সেদিন। পরে কোনো প্রয়োজনে দরকার হলে নক দিত, শহরে যেতে হলে জানাতো।

এরপর থেকে দুজনের একসঙ্গে ঘোরাঘুরি শুরু। তায়েফুর রহমান বলেন, শহরে নিয়ে যেতাম, ঘুরতাম, কথাবার্তা চলতে থাকে, এভাবেই চলে কিছুদিন। এভাবেই এক সময় একে অপরকে ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে প্রপোজ করা হয় নাই কোনোদিন। পরে একদিন এলাকার এক বন্ধুর কাছে ওর খোঁজ খবর নিতে গিয়ে জানতে পারি যে সে আমার অন্য একজন বন্ধুর ছোটবোন।

অহিদার জামা-কাপড়-জুতা যত আছে সব তায়েফুর রহমানের পছন্দে কেনা। কারণ অহিদা নিজের পছন্দে কিছুই কিনতে পারে না। তায়েফুর রহমান বলেন, জামা-কাপড় পরে সে, কিন্তু পছন্দ আমার। এটা অনেকেই জানে না। এর মধ্যে ১১ বছর যা কিছু ব্যবহার করছে সব আমার পছন্দের। আমি না থাকলে ভিডিও কলে দেখাতো, ছবি পাঠাতো। আমাকে না দেখিয়ে কিছু কিনেনি এখন পর্যন্ত। এমনকি আমাকে ছাড়া কখনো রেস্টুরেন্টেও যায় না।

অহিদা-রিয়াদের ক্যাম্পাসে সব থেকে বেশি সময় কেটেছে আব্দুল জব্বার মোড়ে এবং ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপাড়ে। আওয়ালের দোকান, ভাই ভাই হোটেল, মিলন হোটেল— এসব জায়গায় বসে তারা নাস্তা করতেন। তিনি বলেন, নাস্তার সময়ে দেখা করতাম। আর বাকি সময়টা নষ্ট করতাম না। এক দেড় ঘণ্টার মধ্যে ঘোরাঘুরি করে তাকে হলে দিয়ে আসতাম। রাত্রে ঘোরাঘুরি করতাম না। একা একা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে ভালো লাগতো না।

এক হাতে ছাত্র রাজনীতি ও প্রেম— দুইটাই সামাল দিতে হয়েছে রিয়াদকে। তিনি বলেন, ছোট ভাই যারা আছে, রাতে দশ জন নিয়ে বসে গল্প করতাম। ৫-৬ জন সব সময় থাকতো। করোনার মধ্যে ওকে রেখে বাসায় গিয়েছিলাম, পরে আর আসতে পারেনি। বেশ কষ্ট লেগেছিল সেই সময়। নিজেকে দোষী মনে হতো। এটাই সব থেকে বেশি সময় দেখা হয়নি আমাদের, প্রায় তিন মাস। এই মার্চের ২০ তারিখে আমাদের সম্পর্কের ১১ বছর পূরণ হবে।

ক্যাম্পাস জীবনের শুরু থেকেই রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন রিয়াদ। তিনি বলেন, সম্পর্কের শুরু থেকেই সে জানতো যে আমি রাজনীতি করি। এটা নিয়ে কখনো কোনো ঝামেলা হয়নি আমাদের। আমার রাজনীতির কারণে তাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আমার রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সময়ও আমাকে সে অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। আমাকে চাপ দিতো ভালো কিছু করার জন্যে। কিন্তু ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি কখনো আসেনি।

অহিদা-রিয়াদের এমন প্রেমের গল্প এখন ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে পরিবারেও পৌঁছে গেছে। তিনি বলেন, এখন ব্যাপারটা হচ্ছে আমাদের ফ্যামিলিতে ওর ব্যাপারে জানে, আবার ওর ফ্যামিলিও আমার ব্যাপারে জানে। আমি ওদের বাসায় যাই ওর আব্বা আমার সাথে দেখা করি। সেও আমার বাসায় আসে দেখা করে। আমার আব্বা অসুস্থ হলে দেখা করতে আসে। দুই পরিবারের পারিবারিক বন্ধনও বেশ দৃঢ়।

প্রেম-ভালোবাসা শেষে এখন শুধু প্রণয়টা বাকি। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় এখনো সে আনুষ্ঠানিকতা বাকি থেকে গেছে। শাখা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও সেটিও সেরে ফেলতে চান রিয়াদ। তিনি বলেন, শুধু আনুষ্ঠানিকতা একটু বাকি এই যা। সামনে সে পিএইচডি করতে দেশের বাইরে যাবে। আমিও কমিটির সাবেক হওয়ার সাথে সাথে বিয়ে করবো। পদে থাকা অবস্থায় বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। বড় আয়োজনেই বিয়ে করবো। দীর্ঘ সম্পর্কের এখন পূর্ণতার তৃপ্তিই বাকি শুধু।