১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০১

বাকৃবির বধ্যভূমি যেন গণহত্যার নীরব সাক্ষী

বাকৃবির বধ্যভূমি  © টিডিসি ফটো

মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের নির্মমতার সাক্ষী হয়ে আছে বাংলাদেশের অনেক বধ্যভূমি। যেখানে দেশের মুক্তিকামী মানুষদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বাকৃবির সকল বীর শহীদদের আত্মহুতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফাস্টগেট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে নির্মাণ করা হয় বধ্যভূমি।

স্বাধীন বাংলাদেশে এক সাথে সব জেলায় বধ্যভূমি নির্মাণ করা হয়। তখন বাকৃবিতে শহীদদের স্মরণে বধ্যভূমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর (পিডব্লিউডি) এর অর্থায়ন ও পরিকল্পনায় বধ্যভূমির নির্মাণ কাজ শুরু করে। পরে ১৯৯৩ সালের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ মো. ফারুক বাকৃবির এ বধ্যভূমি উন্মোচন করেন।

গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চেলে পাশাপাশি বাকৃবির সবুজ চত্বরকে সে দিন রক্তে রঞ্জিত করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। সে সময় এ দেশের লাখ কোটি জনতার পাশাপাশি বাকৃবির ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম অজানা অনেক ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরিতে একজন শিক্ষকসহ ১৮ জন শহীদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। শহীদের স্মৃতিকে ধরে রাখার লক্ষ্যে কয়েকজন শহীদের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ জামাল হোসেন হল, শহীদ শামসুল হক হল এবং শহীদ নাজমুল আহসান হল নামে তিনটি হলের নামকরণ করা হয়েছে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শামসুল ইসলাম, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল হক, অধ্যাপক আতিয়ার রহমান মোল্লা, অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন, অধ্যাপক ড. শেখ জিনাত আলী, অধ্যাপক ড. নূর মো. তালুকদার, সাবেক রেজিস্ট্রার মো. নজিবুর রহমানসহ ৮৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ডায়েরিতে উল্লেখ রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে ইপিআর ক্যাম্পের অস্ত্র দিয়ে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকবাহিনী ময়মনসিংহ শহরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড শুরু করে যাদের সহায়তা করে রাজাকার এবং আলবদর বাহিনী। যুদ্ধের পর ময়মনসিংহ শহরের ডাকবাংলো, কেওয়াটখালী, বড়বাজার, নিউমার্কেট, কালীবাড়ি এবং সাহেব আলী রোডের পুকুর থেকে পাওয়া নরকঙ্কাল। 

যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাক হানাদার বাহিনী ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে মুক্তিকামী মানুষদের ধরে আনে বাকৃবির পাশ দিয়ে বহমান পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে। সেখান থেকে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের হাত থেকে বেঁচে ফিরতে পারে নি। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হয়। বিজয়ের পতাকা হাতে নিয়ে গণকবরের কাছে কেউ তার মাকে, কেউ তার স্বামী, কেউ তার সন্তানকে খুঁজে ফেরে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অগণিত মানুষকে মেরেছে পাক হানাদার বাহিনী। এ সকল বীর শহীদদের আত্মহুতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে বাকৃবির ফাস্টগেট এলাকায় হয় বধ্যভূমি।

বাকৃবির সকল বীর শহীদদের স্মরণ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী বর্বরোচিত গণহত্যা চালায়। তাদের এই হত্যাকাণ্ডে রক্ষা পায়নি বাকৃবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারী। তাদের এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এটি যারা করেছে তারা মানুষের কাতারে পড়ে না। শহীদদের অবদান স্মরণীয় করে  রাখতে বাকৃবির বধ্যভূমি নির্মাণ করা হয়।