চিকিৎসা কেন্দ্রকে হল বানিয়ে নবীন ছাত্রীদের রাখছে বাকৃবি
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শতভাগ আবাসিক ক্যাম্পাস হিসেবেই পরিচিত। তবে বর্তমানে প্রায় ২০০ জন ছাত্রী মূল হল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা নতুন ছাত্রী হল নামকরণে হেলথ কেয়ারে অবস্থান করছেন। গত পাঁচবছর যাবত মূল হলের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে নবীন ছাত্রীদের এখানে রাখা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন হল নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এ সংকট কেটে যাবে।
হেলথ কেয়ারে অবস্থানরত ছাত্রীরা জানিয়েছেন, মূল হলগুলোর মতো আবাসন ব্যবস্থা ও সার্বিক পরিবেশ না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তদের। এজন্য স্থায়ীভাবে মূল হলে ওঠার দাবিতে প্রতিবছরই নানাভাবে আন্দোলন করেন এখানে অবস্থানরত ছাত্রীরা।
নতুন ছাত্রী হল (হেলথ কেয়ার) রোজী জামাল হলের একটি অংশ হিসেবে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে আসার আগ পর্যন্ত সেখানে থাকবে। -উপাচার্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের চার তলা বিশিষ্ট হেলথ কেয়ারের তৃতীয় ও চতুর্থ তলাকে নামকরণ করা হয়েছে নতুন ছাত্রী হল নামে। ২০১৯ সাল থেকে নবীন ছাত্রীদের সেখানে অস্থায়ীভাবে রাখা হচ্ছে। ১ম বর্ষে সম্পূর্ণ সময় হেলথ কেয়ারে থাকতে হয় তাদের। পরবর্তীতে ওই ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল হলগুলোর গণরুমে স্থানান্তর করা হয়।
কার্যত নতুন ছাত্রী হল নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো হল নেই। বর্তমানে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও রোজী জামাল নামে তিনটি নতুন ছাত্রী হলের কাজ চলমান রয়েছে। তবে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা হলের কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। আর রোজী জামাল হলের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেলথ কেয়ারে অবস্থান করা প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, ভর্তির সময় আমাদের হল অ্যাটাচমেন্ট দেওয়া হয় নতুন ছাত্রী হল। পরবর্তীতে জানতে পারলাম যে, নতুন হলের অস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে আমাদের হেলথ কেয়ারে ওঠানো হয়েছে।
‘‘অ্যাটাচমেন্ট দেওয়া হলের নির্মাণ কাজ মাত্র পাইলিং পর্যায়ে। যে হলের এখনও পর্যন্ত কোনো দেয়াল নির্মাণ হয়নি, সেই হলের অ্যাটাচমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কীভাবে দিতে পারে?’’
আরও পড়ুন: অপ্রয়োজনীয় ভবন না করে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করার আহ্বান
হেলথ কেয়ারে বসবাসকারী একাধিক শিক্ষার্থী তাদের বিভিন্ন অসুবিধা উল্লেখ করে জানান, একটি বেডে দুইজন করে থাকতে হয়। যা আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর। জনপ্রতি কেবল একটি সেলফ রাখলেও হাঁটার পর্যন্ত জায়গা থাকে না। ঠিকমতো রাখার জায়গার অভাবে বইখাতা, কাপড়-চোপড়সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এমনকি হারিয়েও যাচ্ছে।
তিনি বলেন, হেলথ কেয়ারে আমাদের কোনো রিডিং রুম নাই। সে কারণে আমাদের পড়াশোনা করতেও অনেক অসুবিধা হয়। গণরুমে ৪৮ জনের হট্টগোলের মধ্যে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া অসম্ভব। ফলস্বরূপ বারান্দায় বসে পড়াশোনা করতে হয়। বৃষ্টির দিন বা প্রতিকূল আবহাওয়ায় বারান্দায় পড়ার মতো অবস্থা থাকে না। হলগুলোর মতো এখানে কোনো লাইব্রেরিও নেই।
ছাত্রীরা জানান, খাবার একজন মানুষের মৌলিক অধিকার। হেলথকেয়ারে ক্যান্টিন বা কোনো ডাইনিং ব্যবস্থা নেই। প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবারের হোটেলগুলো থেকে খাবার অর্ডার করে খেতে হয়। সামান্য কিছু কিনতেও আমাদের আব্দুল জব্বার মোড় বা কেআর মার্কেটে যেতে হয়। পাশাপাশি এখানে আমাদের নামাজেরও কোনো রুম নেই।
‘‘রুমগুলো মূলত হেলথ কেয়ারের কমন কেবিন ও স্পেশাল কেবিনের আদলে তৈরি হওয়ায় বাথরুম ব্যবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। চতুর্থ তলায় মোট ৬০ জন শিক্ষার্থীর জন্য বাথরুম রয়েছে মাত্র তিনটি। হেলথ কেয়ারে সার্বক্ষণিক বাইরের মানুষের যাতায়াত চলতে থাকে। এমতাবস্থায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছি।’’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো হারুন-অর-রশিদ বলেন, হেলথ কেয়ারের ছাত্রীদের রোজী জামাল হলে স্থানান্তর করা হবে। বর্তমানে রোজী জামাল হলের কাজ শেষ না হওয়ায় এখনই এসব ছাত্রীদের স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। হলের একাংশের কাজ শেষ হলে বর্তমানে টিনশেডে থাকা শিক্ষার্থীদের প্রথমে স্থানান্তর করা হবে।
একটি বেডে দুইজন করে থাকতে হয়। যা আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর। জনপ্রতি কেবল একটি সেলফ রাখলেও হাঁটার পর্যন্ত জায়গা থাকে না। -ভুক্তভোগী ছাত্রীরা
তিনি বলেন, হলের প্রথমাংশের কাজ শেষ হতে আরও দুই মাস সময় লাগতে পারে। হলের দ্বিতীয় বিল্ডিং-এর কাজ শেষ হলে হেলথ কেয়ারের ছাত্রীদেরও পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করা হবে। আপাতত হেলথ কেয়ারে শিক্ষার্থীদের জন্য টিভিরুম ও খেলাধুলাসহ অন্যান্য কিছু সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, নতুন ছাত্রী হল আসলেই কোনো হল নয়। নতুন ছাত্রী হল (হেলথ কেয়ার) রোজী জামাল হলের একটি অংশ হিসেবে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে আসার আগ পর্যন্ত হেলথ কেয়ারে থাকবে। পরবর্তীতে রোজী জামাল হলের কাজ শেষ হলে পর্যায়ক্রমে তাদেরকে রোজী জামাল হলে স্থানান্তর করা হবে। এবছর ভর্তি হওয়া নতুন ছাত্রীদের স্থায়ী হলে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।