নিয়োগের এক যুগ পর জানা গেল শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতাই ছিল না অধ্যাপকের
এক যুগের বেশি সময় আগে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন মো. মেহেদী হাসান। বছর দুয়েক আগে সর্বশেষ পদোন্নতি পেয়ে তিনি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালটির অধ্যাপক। এরমধ্যে দায়িত্ব পালন করছেন বিভাগটির চেয়ারম্যানের।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-রেজিস্ট্রারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের বির্তকিত পোস্টার ছাপিয়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন তিনি। এবার তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যার শিক্ষক হওয়ারই যোগ্যতা ছিল না তিনি এখন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের। তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি মনে করে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন তা এখন ভাবনার বিষয়। অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসানের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়ার সেই বিজ্ঞপ্তি ও তার একাডেমিক সনদের কপি এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসানের প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১০ সালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক (নন টেকনিক্যাল) হিসেবে চাকরি পান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার ড. নির্মল চন্দ্র সাহা স্বাক্ষরিত সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবেদন প্রার্থীর শিক্ষা জীবনের সব স্তরে প্রথম বিভাগ/শ্রেণি থাকতে হবে। পাশাপাশি প্রার্থীর স্নাতকে জিপিএ/সিজিপিএ-৪ এর জন্য কমপক্ষে ৩ দশমিক ৭৫ থাকতে হবে। তবে মো. মেহেদী হাসানের স্নাতকে সিজিপিএ-২ দশমিক ৯৫ হওয়া সত্ত্বেও তিনি সেসময় প্রভাষক পদে আবেদন করেছেন এবং নিয়োগও পেয়েছেন। এর আগে তিনি ২০০৪ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন প্রভাবশালী স্থানীয় এক নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডেপুটি রেজিস্ট্রার প্রভাব খাটিয়ে মো. মেহেদী হাসানকে সেই সময় এই নিয়োগ দেন। আর নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকদের তিনি ব্ল্যাকমেইল করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, নিয়োগ বিতর্ক ছাড়াও বর্তমানে অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসান ক্যাম্পাসে বিভিন্নভাবে বিতর্কিত। তার প্রমোশন প্রক্রিয়া নিয়েও অভিযোগ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মানহানি এবং উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে পোস্টার ছাপানোর কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসান বলেন, স্নাতকে প্রথম শ্রেণির শর্ত শিথিল করা যেতে পারে এমন শর্ত ছিল তাই নিয়োগ পেয়েছি।
কিন্তু তার স্নাতকের ফলাফল গ্রেডিং পদ্ধতিতে হওয়ায় কিভাবে শর্তের আওতায় পড়লেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আবেদন করেছি, কতৃপক্ষ ভাইভা কার্ড দিয়েছে, ভাইভা বোর্ডে উত্তীর্ণ হয়েছি। যারা আমাকে নিয়োগ দিয়েছে এ বিষয়ে আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, তার কর্মকান্ডে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। আমি দেখেছি তার (মেহেদী হাসান) রেজাল্টের সাথে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত রেজাল্টের তারতম্য রয়েছে। তৎকালীন প্রশাসন কি মনে করে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন তা তারাই বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত যোগ্যতার সাথে প্রার্থীর যোগ্যতার মিল না থাকলে নিঃসন্দেহে তা অনিয়ম এবং আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।