১২ মে ২০২৩, ০৮:৪৯

সেশনজটের কবলে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

করোনা মহামারির প্রকোপে দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট তৈরি হয়। এ জট নিরসনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের মতো করে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ফলে সময়ের চাকা ঘুরলেও নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার। বর্তমানে বাকৃবিতে শিক্ষার্থীদের দুটি ব্যাচ দ্বিতীয় বর্ষে (লেভেল ২) অধ্যয়ন করছেন।

শিক্ষার্থীরা  বলছেন, দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট কাটাতে সেমিস্টারের সময়সীমা কমানো এমনকি সিলেবাস কমানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বাকৃবিতে সেমিস্টারের সময় সীমা এমনকি পরীক্ষার সময়সীমা কমাতেও দেখা যায়নি। এর ফলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের এক বছর বা তার বেশি সময় পরে স্নাতক সমাপ্ত করার শঙ্কা করছেন। সেশনজটের কারণে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে অনুষদগুলোর।

ভেটেরিনারি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের (ফাইনাল সেমিস্টার) শিক্ষার্থী মো. আশিকুজ্জামান বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের  অন্যান্য সন্তানদের মতো ছাত্রজীবন শেষ করার পর সরকারি চাকরি একটি মূখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু এই সেশনজটের কারণে স্নাতক সমাপ্তির অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এই সমস্যা সমাধানে যুগোপযোগী ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত আশা করেছিলাম। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি দিয়ে দিন দিন বাড়ছে একাডেমিক চাপ ও চাকরির বয়সসীমা শেষ হবার শঙ্কা। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে তুলনা করলে  বাকৃবি প্রসাশন এদিক থেকে অনেকটাই ব্যর্থ। এই দীর্ঘ অপেক্ষায় পড়াশোনার মানসিকতায়ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে।

আরও পড়ুন: বাকৃবিতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারি, আহত অর্ধশতাধিক

কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের (প্রথম সেমিস্টার) আরেক শিক্ষার্থী মুনতারিন ফারাহ। সেশনজটের বিষয়ে তিনি জানান, করোনা মহামারি আমাদের প্রত্যেকের জীবন থেকেই দেড় বছরের বেশি সময় কেড়ে নিয়েছে। এদিকে সেশনজটে তা কমারও কোনো সুযোগ নেই। চাকরির প্রস্তুতিসহ অন্যান্য বিষয়ের সময়সীমা কমে যাওয়ায় বাড়ছে দুশ্চিন্তা। অনেকের বাবা-মা চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে শিক্ষার্থীদের উপর বাড়ছে মানসিক চাপ।

‘‘করোনার সময় থেকে এমন মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো কঠিন বাস্তবতায় পা দিয়েছেন অনেকেই। তাই প্রশাসনের প্রতি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করার অনুরোধ করছি।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, এ বিষয়ে এখনও অফিসিয়াল কোনো আলোচনা হয়নি। ডিন কাউন্সিল ও শিক্ষা শাখার সকলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষেই সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আজ শুক্রবার সেশনজট নিরসনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সেমিস্টার সময়সীমা বা সিলেবাস কমানোর বিষয়টি ডিন কাউন্সিলের একার সিদ্ধান্তে হয় না। এসকল কার্যক্রমে শিক্ষা শাখার সহিযোগিতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শিক্ষা শাখার আলোচনা সভায় অধ্যাদেশের মাধ্যমে সেমিস্টার সময়সীমা কমানোর এবং সে অনুযায়ী সিলেবাস প্রস্তুত করার বিষয়টি উত্থাপন করতে হবে। সভায় সিদ্ধান্ত পাশ হলে তবেই সেমিস্টার কমানোর কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে।

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম সেমিস্টার ভিত্তিক হওয়ায় সময়সীমা কমানোর বিষয়টি একটু জটিল। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদেরকেও সহযোগিতা করতে হবে। অলিখিত বা পরীক্ষার মাঝে তাদের যে অতিরিক্ত  ছুটিগুলো থাকে সেগুলো কমিয়ে আনলেই সেমিস্টার সময়সীমা প্রায় মাসখানেক কমানো সম্ভব।