শ্রমিকদের আবাসনে বাকৃবি ছাত্রলীগের ভাঙচুর, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ঈশা খাঁ হলের ছাত্রলীগ কর্মীর কক্ষের সিলিং ফ্যান খুলে পড়ায় ওই হলের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের অস্থায়ী আবাসনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে চাঁদার টাকা না দেয়ার কারণে ছাত্রলীগের কর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী ঠিকাদার মো. রাকিব।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশা খাঁ হলের সামনে শ্রমিকদের ওই অস্থায়ী আবাসনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় ওই হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের পাল্টা দাবি যে হলের উন্নয়নের কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের করায় তাদের উপর চড়াও হয়েছে তারা।
ওই প্রকল্পের সহকারী ঠিকাদার মো. রাকিব অভিযোগ করে বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে আমাদের কাছে চাঁদার দাবি করে আসছেন ঈশা খাঁ হল ছাত্রলীগের নেতা অপু, মশিউর, জীবন এবং রেজওয়ান। ১১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশা খাঁ হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আমাদের কাজে তারা বাঁধা দিচ্ছে।
গতকাল রেজোয়ান নামের হল ছাত্রলীগের ওই নেতা নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আমাকে তাদের রুমে যেতে বলেছিল। ওই টাকা দেইনি বলে তারা আজকে ভাঙচুর করেছে। তারা আমাদের ৩ দিনের আল্টিমেটাম দেয় অস্থায়ী আবাসন তুলে নেওয়ার জন্য। আমরা তাদের জানিয়েছি এখানে থাকার জন্য কর্তৃপক্ষ আমাদের অনুমতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দেওয়া নিয়ে শেকৃবিতে মারামারি, আহত ৪
ভাঙচুরের ঘটনায় ওই ঠিকাদারের দাবি, ওই নেতার রুমের সিলিং ফ্যান খুলে পড়ার বিষয়টি সাজানো নাটক। ৬ মাস আগে ফ্যান লাগানো হয়েছে। ফ্যান খুলে পড়ার জিনিস নয়। তারা নিজেরাই এগুলো করে আমাদের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। এমনকি গতকাল আমাদের কাছ থেকে ৯৬ হাজার টাকা স্বাক্ষর করা একটি চেক বই নিয়ে গেছে।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ঠিকাদারের ওই টিনের ঘরগুলো থেকে গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সরবরাহ করা হয় হলগুলোতে। এছাড়া হল কাজে চরম গাফিলতি, নিম্নমানের সংস্কার কাজ এবং শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন ঠিকাদার।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ঈশা খাঁ হলের ছাত্রলীগ নেতা রাব্বি হাসান অপু জানান, হলে চলমান উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবগত রয়েছে। রেজওয়ানের কক্ষের সিলিং ফ্যানটি খুলে পড়ে যেসময় সে নামাজে ছিল। তাই সে দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে। পরে স্বাভাবিকভাবে সে অফিসে যোগাযোগ করে। এরপর সেকশন অফিসার লিয়াকত মিয়া এসে ঠিকাদার রাকিবকে ফোন দেয়।
তিনি বলেন, ঠিকাদার রাকিব তখন জানায় যে ছাত্ররা আমাদের টাকা খসানোর জন্য নিজেরা ইচ্ছা করেই ফ্যান খুলে ফেলেছে। এরপর মশিউর আর রেজওয়ান ঠিকাদার রাকিবকে ফোন দেয়। এসময় ঠিকাদার রাকিবকে তার কাজের গাফিলতির কথা বলা হলে সে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে তাদের অস্থায়ী আবাসনে ভাঙচুর করে।
তবে চাঁদা চাওয়া বিষয়টি অভিযুক্ত হল ছাত্রলীগ নেতারা অস্বীকার করেছেন। তারা জানান, তাদের সাথে টাকা পয়সার কোনো লেনদেনই হয়নি। এমনকি কোনো দুর্ব্যবহারও করা হয়নি। আমাদের রাজনীতি সম্পর্কে সকলেই জানে। একজন ঠিকাদারের কাছে ১১ লাখ টাকা চাওয়ার মতো সাহস কোনো ছাত্র রাখে না। আমার সাথে ঠিকাদার রাকিবের কোনো কথাই হয়নি। তারপরও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমার বোধগম্য নয়।
হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ফকির আজমল হুদা বলেন, আজকে আমরা একটি অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছি। হলের রেজোয়ান নামের এক শিক্ষার্থীর রুমে সিলিং ফ্যান ভেঙে পড়ে। ফ্যানের বিষয়ে আমার হলের দায়িত্বরত কর্মচারী ঠিকাদারকে ঠিক করে দিতে বলে। কিন্তু ঠিকাদার ঠিক করে দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর শিক্ষার্থীদের সবসময় আবেগ কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমরা সকলেই চাই সর্বোচ্চ ভালো কাজটা হোক। ভালো কাজ না হলে অনেক সময় ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হয়।
হলের উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে প্রভোস্টেও কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এসে দেখি সব কাজ নিম্নমানের। পাঁচ মাস আগে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখায় চিঠি লিখে পাঠিয়েছি । সবক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।
বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, আমিসহ সাধারণ সম্পাদক এই মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থান করছি। আমরা ক্যাম্পাসে গেলে বিষয়টি নিয়ে বসবো। তবে যতদূর জানি ওই হলে যারা কাজ করেছে তারা অত্যন্ত নিম্নমানের সংস্কার কাজ করেছে। আর চাঁদা যদি তারা চাইত ওই ঠিকাদারের কাছে তাহলে অনেক আগে কেন চাইল না। ওই ঠিকাদার তো অনেক আগে থেকেই হলের কাজ করছে ওখানে।
ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মহির উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি এই মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থান করছি। সহকারী প্রক্টররা বিষয়টি দেখছে। ক্যাম্পাসে গেলে তাদের কাছে শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।