গুচ্ছ বহাল রাখার দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি, ৫ দফা দাবি
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি এবং খরচ কমাতে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছিল গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা। এই প্রক্রিয়ায় ভর্তি-ইচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়েই তার যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী গুচ্ছে থাকা যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারতেন। কিন্তু এবার কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। আরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। যার ফলে গুচ্ছ নিয়ে দেখা গেছে অনিশ্চয়তা। এ অবস্থায় গুচ্ছ বহাল রাখার দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ২০২৪-২০২৫ সেশনের সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কৃষি গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। শিক্ষার্থীদের ওই দলে ছিলেন আবদুল মালেক সিয়াম, মো. ফাহাদ হোসেন, মোছা, ইফফাত ও মো. নিবিড় হোসেন।
স্মারকলিপি থেকে জানা গেছে, গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি বহাল রাখার জন্য ৫ দফা দাবি উপস্থাপন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে গুচ্ছ পদ্ধতি বহাল রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো:
১. গত চার বছর ধরে ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা এবং বিগত পাঁচ বছর ধরে কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ায় নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের ভরসার একমাত্র জায়গা ছিল গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। অনেক অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা আছেন যাদের ঢাবি, জাবি, রাবি, চবিতে ফর্ম তোলার খরচ, যাতায়াত খরচ জোগাড় না হলেও শুধুমাত্র গুচ্ছের জন্য তারা ভর্তি প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ গুচ্ছ প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে গেলে অনেক দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ করতে পারবে না এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
২. গুচ্ছ ও কৃষি গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া ভেঙে গেলে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা সিলেকশন পদ্ধতি চালু করে যার ফলে জিপিএ ৫ পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা অংশগ্রহণ করতে পারে না। যেমন-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেকশনের কারণে ৪০ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। ফলে আমাদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারব না এবং আমরা আমাদের মৌলিক শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবো ।
৩. প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন কাঠামো ভিন্ন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভর্তি প্রস্তুতি নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ও হতাশায় ভোগে। যেমন, গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার আগে পর্যন্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন কাঠামো হতো প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশ্ন কাঠামোর মতো। কিন্তু বিগত চার বছর ধরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিগত প্রশ্নকাঠামো অনুসরণ করেই লাখ লাখ শিক্ষার্থী সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছে। এখন হঠাৎ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা হয়ে গেলে সঠিক প্রস্তুতির অভাবে অনেক অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে ।
৪. বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও দেশের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় গিয়ে সবগুলো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। অথচ যোগ্য হিসেবে পরীক্ষা দেওয়া একজন শিক্ষার্থী মৌলিক অধিকার ।
৫. এবার যেসব শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার ভর্তি প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন অর্থাৎ ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র গুচ্ছকে ভরসা করেই পুনরায় ভর্তি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তাদের বেশিরভাগের পরিবার থেকেই আর্থিক ও মানসিক কোনোরকম সমর্থন পায় না তারপরও তারা সকল বাধা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র নিজেদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ভর্তি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিলে সেখানে দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করবে বা প্রস্তুতির জন্য মার্ক কর্তন করা হবে, যা গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতিতে ছিল না। সেই সকল ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য তা খুবই হতাশাজনক। অথচ ইউজিসি আইন অনুযায়ী দ্বিতীয় বার ভর্তির পরীক্ষা বন্ধ করার অন্তত এক বছর পূর্বে জানিয়ে দিতে হয়।