ঢাবিতে পোষ্য কোটায় বছরে ২৬ শিক্ষার্থী ভর্তি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) প্রতি বছর গড়ে অন্তত ২৬ জন পোষ্য কোটায় ভর্তি হচ্ছেন। ২০২০-২১ থেকে সর্বশেষ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এ চার বছরে অন্তত ১০৬ জন কোটার সুবিধা গ্রহণ করেছেন। তবে এ সময়ে পোষ্য কোটায় আবেদন পড়েছে ১৭৭টি।
বিশ্ববিদ্যালয় সুত্র বলছে, এ কোটায় আবেদনকারীদের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ ভর্তি হয়েছে মেধাভিত্তিক সিট থেকে। অর্থাৎ তারা পোষ্য কোটায় আবেদন করেছিলেন; তবে এ কোটা ছাড়াই বিষয় পেয়েছেন। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে অন্তত ২৭ জন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ২৫, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ২৪ এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে অন্তত ৩০ জন এ কোটায় ভর্তি হয়েছেন।
অনলাইন ভর্তি কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পোষ্য কোটায় যারা ভর্তি হয়েছেন, তাদের সিট সম্পূর্ণ মেরিট-বেইসড সিটের বাইরে। পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়ার কারণে মেরিট-বেইসড সিটে কমতি হয় না। বলা যায়, এটি অতিরিক্ত ভর্তি।
আবেদনকারীদের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ ভর্তি হয়েছে মেধাভিত্তিক সিট থেকে। অর্থাৎ তারা পোষ্য কোটায় আবেদন করেছিলেন; তবে এ কোটা ছাড়াই বিষয় পেয়েছেন। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে অন্তত ২৭ জন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ২৫, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ২৪ এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে অন্তত ৩০ জন এ কোটায় ভর্তি হয়েছেন।
পোষ্য কোটার আবেদন করতেও ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু পাস করলেও হবে না। যে বিষয়ে পড়তে আগ্রহী, সে বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নম্বর তাকে ভর্তি পরীক্ষায় পেতে হয়।
এদিকে পোষ্য কোটা ইস্যু নিয়ে সরব হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনেকের অভিযোগ, এ কোটা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকতে পারে। কিন্তু যার কোনো সমস্যা নেই, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বাবা অথবা মা চাকরি করেন বলে অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন, তা মানা যায় না।
গত ২১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ভর্তি কমিটির সভা এবং ২৭ অক্টোবর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তির কোটাগুলোর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ওয়ার্ড কোটা, খেলোয়াড় কোটায় সংযোজন ও সংশোধনের জন্য রিভিউ কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হককে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রিভিউ কমিটির সভায় বিগত বছরগুলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী যেকোনো নির্ধারিত কোটায় আসন পূরণ না হলে মূল মেধাতালিকার ক্রমানুযায়ী শূন্য আসন পূরণ করার সুপারিশ করা হয়। সাধারণ ভর্তি কমিটির ২১ অক্টোবরের সভার আলোচ্যসূচি ৫–এর সিদ্ধান্তের আলোকে প্রদত্ত ক্ষমতা অনুযায়ী, এ সুপারিশগুলো ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই কার্যকর করা এবং তা কার্যকরকল্পে ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিতে ওয়ার্ড বা পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে আবেদন প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আবেদনের পঞ্চম ধাপে আবেদনকারী পরবর্তী পাতায় প্রদর্শিত ছবি-৫ এ অনুরূপ ফরমে তার পরীক্ষা কেন্দ্রের বিভাগীয় শহর বেছে নেবে। শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কোটার তথ্য জানাবে।
আবেদনকারী শিক্ষার্থী যদি কোটার জন্য নির্ধারিত আসনে আবেদন করতে চায়, তবে প্রযোজ্য কোটার ঘরে ক্লিক করে নিচের কাজ করবে— বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে পিতা বা মাতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইডি নম্বর দেবে এবং সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের পে স্লিপ আপলোড করবে।
আরো পড়ুন: বিইউপি দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তিযুদ্ধ
পোষ্য কোটা সংরক্ষণ করা কতটা যৌক্তিক?
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সংবিধানের ২৮ (৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নারী, শিশু ও যারা অনগ্রসর আছে, তাদের জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে রাষ্ট্রকে নিবৃত করবে না। তার মানে নারী, শিশু ও নাগরিকদের মধ্যে অনগ্রসরদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া যায়।
যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করে, তাদেরকে অনগ্রসর বলা যাবে না উল্লেখ করে এ আইনজীবী বলেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানে এবং পড়াশোনা নিয়ে ধারণা আছে। সুতরাং এরা অনগ্রসর শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হবে না বিধায় এ পোষ্য কোটা বাতিল হলে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না।