২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৮

‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির গুচ্ছ ভেঙে গেলে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবে’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা  © ফাইল ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির গুচ্ছ পদ্ধতি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। এতে অনেক দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবে বলে তারা জানিয়েছেন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে লিখিতভাবে এসব কথা বলেছেন তারা।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বলছেন, গুচ্ছ ভেঙে যাওয়ার কারণে অনেক দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবে। আগে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ১৫শ’ টাকায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যেত এবং মেরিট আসার পর ভার্সিটি প্রতি ৫০০ টাকা দিয়ে আবেদন করতে হতো। এখন সেখানে কয়েকগুণ বেশি টাকা লাগবে, যা অনেক শিক্ষার্থীরই সামর্থ্যের বাইরে। আগে আলাদা আলাদা সাবজেক্ট চয়েস দিতে হতো বলে বারবার ভর্তি বাতিল করতে হতো। কারণ অনেকের এক জায়গাতে ভর্তি থাকা অবস্থায় আরেক জায়গায় ভালো সাবজেক্ট আসতো। 

তাদের ভাষ্য, জগন্নাথ, শাবিপ্রবি, নোবিপ্রবি, ইবি,কুবিসহ অন্যান্য ভার্সিটিগুলো গুচ্ছ থেকে সরে আসার কথা শোনা যাচ্ছে। ফলে তারা এখন ইউনিট হিসেবে আবেদন করতে দেবে। ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োলজি সাবজেক্ট, বিভাগ পরিবর্তন, প্রতিটি ইউনিটে আলাদাভাবে আবেদন করতে হবে। ফলে দেখা যাবে, একটা ভার্সিটিতেই ৩-৪ হাজার টাকা আবেদনের পেছনে খরচ হচ্ছে। অথচ গুচ্ছ পদ্ধতিতে শুধু বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট ছিল। একটি পরীক্ষা দিয়েই বিভাগ পরিবর্তনও করা যেত, যা অনেক সহজ ও টাকার দিক দিয়েও সুবিধাজনক ছিল।

গত বছর ২৩ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থীর ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, সব ভার্সিটি (গুচ্ছসহ) আবেদন করলে গড়ে ১৫ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। গুচ্ছ ভাঙার কারণে এ খরচ দাঁড়াবে ৫০ হাজারের বেশি। এর সঙ্গে যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার খরচও আছে। দেশ ঘুরে এভাবে এক্সাম দিলে সব ভার্সিটির পেছনে কেবল যাতায়াত খরচই দাঁড়াবে ২ লাখ টাকার বেশি। অ্যাডমিশন পিরিয়ডে বই কেনা, কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া এসব মিলে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। 

গুচ্ছ ভাঙলে কি তবে শুধুই অসুবিধা?
গুচ্ছ ভাঙার কারণে একবারে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় হাতছাড়া হবে না। একবার পরীক্ষা খারাপ করলে ভুল ঠিক করে চান্স পাওয়ার ভালো সুযোগ পাওয়া যাবে বলে মত অনেকের। তবে এত বড় খরচ সবাই বহন করতে পারবে না। গুচ্ছে সিট সংখ্যা নির্ধারিত। তাই আলাদাভাবে পরীক্ষা নিলেও সমান সংখ্যক শিক্ষার্থী চান্স পাবে। গুচ্ছে আসন যদি ২৩ হাজার হয় আর পরীক্ষার্থী যদি দেড় লাখের বেশি হয়, তাহলে সহজ হিসাব এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর কোনো জায়গাতেই চান্স হবে না। এ কারণেই তারা বলছে যে, আলাদা আলাদা পরীক্ষা নিলে হয়তো চান্স পেতেন।

আরো পড়ুন: গরিব শিক্ষার্থীদের ভর্তির পথ কঠিন করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো?

শিক্ষার্থীদের একাংশ বলছেন, আলাদাভাবে পরীক্ষা নিলেও একই ঘটনা ঘটবে। এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী কোনো জায়গাতেই চান্স পাবে না। তখন তারা বলবে, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে হয়তো চান্স পেতেন। বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে কোনো ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি এসএসসি-এইচএসসির রেজাল্ট দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতে পারতো। আসলে ভর্তি পরীক্ষাই একজন শিক্ষার্থীর দ্বিতীয় সুযোগ।

তারা বলেন, গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সন্তান মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও কেবল টাকার অভাবে নিজের মেধাকে অনেকাংশেই কাজে লাগাতে ব্যর্থ হবেন। এর দায় কে নেবে? অনেকে টাকার অভাবে আবেদন করতে পারবেন না। আবার অনেকে আবেদন করেও হয়তো চান্স পাবে না। দিনশেষে কেবল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পকেট ভরবে বলে অভিযোগ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।