কোচিং না করেও কি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া সম্ভব?
এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে শিক্ষার্থীরা স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাতে খুব বেশি সময় নেই। তাই এই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টায় যে ভালো কিছু করবে, সে-ই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হতে নানা পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাথির আরাফাত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানজিনা তন্বী।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন, এ স্বপ্ন কবে থেকে দেখা শুরু করেছিলেন?
মাহাথির আরাফাত : সত্যি বলতে কলেজে ওঠার পর থেকে স্বপ্ন দেখা শুরু করি। এইচএসসির পর বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে প্রবেশ, ভর্তি পরীক্ষা, কোথাও চান্স পাওয়া—এই বিষয়গুলো কলেজে পা রাখার পর পাকাপোক্তভাবে ভাবতে শুরু করি। হাই স্কুলে থাকতে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে যাবতীয় ধারণা রাখলেও সেভাবে মনে ধারণ করিনি।
এইচএসসি পরীক্ষার পর আপনি কীভাবে ভর্তি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন, ভর্তি কোচিং কি একজন শিক্ষার্থীর জন্য জরুরি?
মাহাথির আরাফাত : এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। এইচএসসি পরীক্ষা কেমন দিলাম, আমার কেমন রেজাল্ট আসবে, জিপিএ ফাইভ থাকবে তো—এ রকম চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে ভর্তি প্রস্তুতিতে ফোকাস করেছিলাম। আর ভর্তি প্রস্তুতিটা বিশাল একটা সাগর মনে হয়েছিল প্রথম প্রথম। তবে ধাপে ধাপে এগিয়েছি। পরীক্ষার মানবণ্টন, কোন বিষয় থেকে প্রশ্ন হয়—এসব আয়ত্ত করে কোশ্চেন ব্যাংক সংগ্রহ করে পড়তে থাকি। প্রয়োজনীয় বইপত্র কিনে ফেলি দ্রুত। কোচিংয়ের শিটগুলো পড়তে শুরু করি। ইউটিউব থেকেও অনেক হেল্প নিই। এখন তো ইউটিউব অনেক সমৃদ্ধ। ভর্তি প্রস্তুতির জন্য যাবতীয় উপকরণ এখানে রয়েছে।
ভর্তি কোচিংটা একদম জরুরি মনে করি না, তবে কিছুটা দরকারি। ভালো গাইডলাইন, অনুপ্রেরণা, সাহস জোগানো ও অনুশীলনের জন্য কোচিং কাজে আসে বেশ। একটা রুটিনে আবদ্ধ থাকা যায়। কেউ চাইলে কোচিংয়ে না গিয়ে নিজের মতো করে পড়লেও পারে। তবে এখন তো কোচিং-কেন্দ্রিক মাইন্ডসেট আমাদের। সবাই ভর্তি হচ্ছে কোচিংয়ে, আমি পিছিয়ে পড়ব, আমার চেয়ে ওরা ভালো করে ফেলবে—এ রকম চিন্তা ভর করে মাথায়।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি পরীক্ষায় ভীষণ প্রতিযোগিতা। অনেকে মানসিকভাবে প্রতিযোগিতা ভয় পায়। মানসিকভাবে হতাশ হয়ে যায়। নিজেকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করার উপায় কী মনে করেন?
মাহাথির আরাফাত : এটা প্রকৃতপক্ষে একটা যুদ্ধ। ভর্তিযুদ্ধ। সারা দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর সঙ্গে যুদ্ধে নামতে হয়। পরীক্ষার্থীর তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন কিন্তু কম। সফল হওয়াটা এজন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আমি একটা আসন দখল করতে পারব তো?—এই ভয়টাই কাজ করে পুরো প্রস্তুতির সময়। মানসিক ভয়টা জয় করার জন্য বেশি বেশি পরীক্ষা দিতে হবে। কোচিংয়ে পরীক্ষা হয়, এখন অনলাইনে এক্সাম ব্যাচে ভর্তি হওয়া যায়। পড়াগুলো বারবার রিভিশনে রাখতে হবে। মডেল প্রশ্ন সমাধান করা যেতে পারে প্রতিদিন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এমন সিনিয়রদের পরামর্শ নিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো যায়।
ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি কীভাবে নেওয়া উচিত মনে করেন, কোন বিষয় বা টপিক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে?
মাহাথির আরাফাত : একাডেমিক লাইফেই বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতিটা মোটামুটি নিয়েছিলাম। বাংলা, ইংরেজিটা একটু বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে পড়েছিলাম। এখানে একসঙ্গে দুইটা কাজ করেছিলাম। একটা টপিক থেকে একাডেমিক পরীক্ষায় কীভাবে প্রশ্ন হয়, সেটা দেখার পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষায় কীভাবে সেই টপিক থেকে প্রশ্ন আসতে পারে সেটাও গুরুত্ব দিয়েছি। পাঠ্যবই বেশি করে পড়তে হবে। আবার কিছু টপিক থাকে যেগুলো মুখস্থ করা ছাড়া উপায় থাকে না। মুখস্থ করতে হয় এমন টপিকগুলো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলার ক্ষেত্রে যেমন বাগধারা, সমার্থক শব্দ, এক কথায় প্রকাশ, বিপরীত শব্দ ইত্যাদি। আবার ইংরেজিতে Appropriate Preposition, Group Verb, Idiom Phrase, Synonym Antonym, Proverb, One Word Substitution ইত্যাদি বিষয়গুলোতে জোর দিতে হবে।
পরীক্ষার আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে আপনি কী কী করেছিলেন?
মাহাথির আরাফাত : সত্যি বলতে পরীক্ষা যতই এগিয়ে আসছিল, মাথায় ততই চাপ বাড়তে থাকে। যতই পড়ি না কেন, মনে হচ্ছিল কিছুই পড়িনি। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিটা আসলে আগের পড়া রিভিশন দেওয়া। শেষ মুহূর্তে এসে, নতুন করে কোনও টপিক না পড়লেই ভালো হয়। আমি তাই একদম শেষ সময়ে এসে আগের পড়াগুলোই বারবার রিভিশন দিয়েছিলাম। সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানে বেশি ফোকাস করি। নিজের তৈরি করা নোট, কোচিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ নোট, দাগিয়ে রাখা কঠিন কোনও পড়া—এসবে বারবার চোখ বুলাই। মাথাটা সতেজ রাখতে চেয়েছি ওই সময়। এজন্য মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, টিভি থেকে দূরে থেকেছি যতটা সম্ভব। সময় নষ্ট যাতে না হয়, সেজন্য কারও সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগও বন্ধ রাখি।
প্রচুর পড়াশোনা করার পরও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কারও চান্স না হয়, তার জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
মাহাথির আরাফাত : ভর্তি পরীক্ষাটা যেহেতু একটা ভর্তিযুদ্ধ, এখানে সবাই জয়ী হবে না—এটাই স্বাভাবিক। তবে হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েই মানুষের জীবন সফলতায় ভরে ওঠে না। ভর্তি পরীক্ষাটা একটা খেলার মতো। কে কোন খেলায় ভালো খেলে ফেলে সেটা বলা যায় না। মেসি-নেইমার সব খেলায় গোল করতে পারে না। বিরাট কোহলি সব ইনিংসে কিন্তু রান করতে পারে না। এখানেও তা-ই হয়। ঢাবিতে পরীক্ষা ভালো হলে, চবিতে হয় না। চবিতে ভালো হলে, দেখা গেল রাবিতে পজিশন একেবারে শেষের দিকে। তাই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেলে ভেঙে পড়লে চলবে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেও ভালো ক্যারিয়ার গড়া যায়, যদি পরিশ্রম ও একাগ্রতা থাকে। তাছাড়া সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দিয়ে আবার চেষ্টা করা যেতে পারে। সেই পরিমাণ ধৈর্য ধরা ও পরিশ্রম করার মানসিকতা নিয়ে আবার নতুন করে প্রস্তুতি শুরু করা যেতে পারে।