ঢাবির ‘খ’ ইউনিটের জন্য প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রত্যেক মানবিক শিক্ষার্থীদের কাছে একটা স্বপ্ন ও আবেগের নাম। বিশেষ করে ঢাবির ‘খ’ ইউনিট। এখানে প্রতি বছর আঠারো শত প্লাস সিটের জন্য লড়াই করে লাখখানেক শিক্ষার্থী। কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান এই তিনটি অনুষদের সমন্বয়ে গঠিত ‘খ’ ইউনিট।
তুলনামূলকভাবে সবার প্রথম চয়েস থাকে আইন নিয়ে পড়ার। আইন নিয়ে পড়তে চাইলে অবশ্যই আপনাকে একশো সিরিয়ালের মধ্যে থাকতে হবে। সাথে বিভাগের দেওয়া কন্ডিশন পূরণ করতে হবে। তারপর বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর চয়েস থাকে ইংরেজি ও অর্থনীতি। দুইশো থেকে সাড়ে তিনশো সিরিয়ালের মধ্যে থাকলে এই সাবজেক্টগুলো পাওয়া যাবে। তারপর বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর পছন্দ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান। চারশো থেকে সাড়ে পাঁচশো সিরিয়ালের মধ্যে থাকতে পারলে এই সাবজেক্টগুলো পাওয়া যাবে। তুলনামূলকভাবে হাজার সিরিয়ালের নিচে থাকলে মনমতো সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে পারবেন।
স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স নেওয়ার জন্য বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকে। এই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময়টায় যে ভালো কিছু করবে, সে-ই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে। অ্যাডমিশনের সময় প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়। চলো জেনে নিই কীভাবে অ্যাডমিশনের সময় পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করা যায়—
প্রতিদিন রুটিন করে পড়া
প্রতিদিনই সবগুলো বিষয় পড়তে হবে। আজকে সাধারণ জ্ঞান পড়ব, কাল ইংরেজি পড়ব এই মনোভাব নিয়ে চললে ভর্তিযুদ্ধ থেকে অনেকটা পিছিয়ে থাকতে হবে। কিন্তু এটা নয় যে, সারা দিন বা রাত জেগে পড়তে হবে। যেটুকু সময়ের মধ্যে পড়া কমপ্লিট করা যায়, সেই সময়টুকু ভালো করে পড়তে হবে। কিছুক্ষণ পরপর বিরতি নিয়ে রিভিশন দিতে হবে।
আগের পড়া রিভিশন দেওয়া
অ্যাডমিশনের সময় প্রচুর পড়তে হয়। বাংলা, ইংরেজিসহ সাধারণ বিষয়ের বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়াবলী। স্বাভাবিকভাবেই অনেক পড়া আত্মস্থ করা কঠিন হয়ে যায়। নতুন বিষয় পড়ার সময় আগের দিনের পড়াটা রিভিশন দিলে সহজে মনে থাকে। প্রতিদিন রুটিনমাফিক প্রত্যেক পড়া রিভিশন দেওয়া দরকার।
বেসিকের ওপর জ্ঞান থাকা
অ্যাডমিশন শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, বেসিকের ওপর সাধারণ জ্ঞান থাকা। যার মাঝে যত বেশি বেসিক জ্ঞান আছে, সে তত বেশি এগিয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজির বেসিক ঠিক রাখা। যার ইংরেজি জ্ঞান সবচেয়ে ভালো, সে-ই ভর্তিযুদ্ধে এগিয়ে থাকে। ভর্তিযুদ্ধে নিজেকে একজন দক্ষ যোদ্ধা ভাবতে হলে বেসিকের জ্ঞান থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মুঠোফোন থেকে বিরত থাকা
পড়াশোনার সময় যেসব বস্তু মনোযোগ নষ্ট করে, সেগুলো থেকে যথাসম্ভব এড়িয়ে থাকতে হবে। বিশেষ করে মোবাইল ফোন বা টেলিভিশন। নিজের পড়ার ঘরে বা আশেপাশে এসব থাকলে পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে যায়। তাই এগুলো থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরি।
বিরতি নিয়ে পড়া
অনেকে আছে যে, টানা পড়াশোনা করে। একটার পর একটা পড়তেই থাকে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আগের পড়াগুলো অটোমেটিক হারিয়ে যায়। জার্মান মনোবিদ হারমান এবিনঘসের মতে, ‘যে কোনও বিষয় এক ঘণ্টা পড়ার পর তার ৪৪ শতাংশ আমাদের মনে থাকে।’ তাই আমাদের তাৎক্ষণিকভাবে রিভিশন না দিয়ে কিছু সময় বিরতি নিয়ে আবার পড়তে হবে। এতে করে সেই পড়াটা অনেক দিন মনে থাকে।
পর্যাপ্ত ঘুম ও ভালো খাবার খাওয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতেই হবে, এই মনোভাব নিয়ে যদি খেয়ে না খেয়ে দিনরাত জেগে পড়াশোনা করো, তাতে শরীরের যেমন ক্ষতি হবে, তেমনি মানসিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়বে। অবশ্যই পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। তার সাথে সাথে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। শরীর ও মন দুটোকেই সব সময় সতেজ রাখতে হবে।
ঘাবড়ে না যাওয়া
অনেকে আছে যারা সামান্যতেই ঘাবড়ে যায়। কোনও একটা বিষয় বুঝতে পারছে না। তাতেই অনেকে ঘাবড়ে যায়। এই সময়টায় ঘাবড়ে গেলে চলবে না। দৃঢ় মনোবল থাকতে হবে। যে বিষয়টা বুঝতে কষ্টকর হয়, সেটা অভিজ্ঞ কারও কাছে জেনে নিতে হবে। সব সময় মাথা ঠাণ্ডা রেখে পড়াশোনা করতে হবে।
নতুনভাবে পড়া তৈরি করা
বিভিন্ন বিষয় আছে যেগুলো মনে থাকে কম। যেমন ভোকাবুলারি। ভোকাবুলারি পড়তে হলে প্রতিদিন পড়তে হবে। কম করে হলেও চল্লিশটা করে ওয়ার্ড প্রতিদিন মুখস্থ করতে হবে। এ ছাড়া অনেক টপিকস আছে যেগুলো ছন্দের মতো বানিয়ে পড়লে সহজে মনে থাকে। সহজ কথায়, নিজের মতো করে সাজিয়ে পড়তে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়