ভর্তিযুদ্ধ শেষে স্নায়ুযুদ্ধে ভর্তিচ্ছুরা
সম্প্রতি গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ (রাবি) (জাবি) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষা শেষে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলও প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাবির বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম প্রায় শেষ। এদিকে ভর্তি কার্যক্রমসহ প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর তারিখও জানিয়ে দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। আগামী ১ নভেম্বর থেকে রাবির প্রথমবর্ষের ক্লাস শুরু হবে।
এদিকে ভর্তিচ্ছুদের সাক্ষাৎকার শেষে চূড়ান্ত মেধাতালিকা তৈরির কাজ চলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রমের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ভর্তি কমিটি।
স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রমের অগ্রগতি হলেও ভোগান্তি বেড়েছে গুচ্ছভুক্ত ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। গুচ্ছ কমিটির সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার অভাবে একরকম স্নায়ুযুদ্ধ করছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনেকটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো। প্রায় একমাস হয়েছে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু গুচ্ছ কমিটি ভর্তির ব্যাপারে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিচ্ছেন না। শিক্ষার্থীদের ওপর তারা এক ধরনের বাড়তি চাপ তৈরি করছেন।’
শিক্ষার্থীরা আরও বলছেন, ‘গুচ্ছের মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হয়েও ভর্তির নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় গুচ্ছের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা অনেক কম। অন্যদিকে গুচ্ছে একটি আসন পাওয়া যাবে প্রত্যাশায় অন্য কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও হতে পারছি না। এছাড়া গুচ্ছে পছন্দের বিষয় পাওয়া যাবে কিনা সেই ব্যাপারেও সন্দিহান।’
জানা গেছে, গুচ্ছের বিজ্ঞান ইউনিটে ৮৫ হাজার ৫৮২ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন, তবে মোট ১১ হাজার ৭১৬টি আসন রয়েছে। অন্যদিকে মানবিক ইউনিটে ৪৮ হাজার ১০৬ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলেও ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৫ হাজার ৭৬৪টি আসন রয়েছে। এছাড়া গুচ্ছের বাণিজ্যে ৩ হাজার ৩৭০টি আসন থাকলেও ভর্তি পরীক্ষায় ২৩ হাজার ২২৮ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। সেই হিসেবে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও প্রায় ৮০% ভর্তিচ্ছু ভর্তির সুযোগ পাবেন না। তবে এই তালিকা ৮০% নাকি এর আরও অনেক কম তা নিয়েই মূলত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
এ ব্যাপারে শরিফুল ইসলাম সাহেদ নামে এক ভর্তিচ্ছু জানান, ‘গুচ্ছে আবেদন কবে থেকে শুরু হবে! এবার তো বলা হয়েছিল কোন বাড়তি টাকা রাখা হবে না। তারা কি এবারও টাকা রাখবে?’
মো. শুভ্র জানান, ‘গুচ্ছের ভর্তি ফি কত? সেটা কমিটি জানাচ্ছে না। আমরা গরিব স্টুডেন্টরা ভাল স্কোর করেও অ্যাপ্লাই করতে পারবো না। ভেঙ্গে যাবো চিরকাল দেখা স্বপ্ন!’
আরও পড়ুন : চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী
শ্রাবণ নামে এক ভর্তিচ্ছু জানান, ‘গুচ্ছের ভর্তি প্রক্রিয়া কী হবে কিছুই বলতেছে না। শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রশান্তি জন্য তাড়াতাড়ি ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করুন। গুচ্ছের ভর্তি নিয়েই খুবই হতাশায় আছি। যতক্ষণ না পর্যন্ত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারছি, ততদিন পর্যন্ত হতাশায় থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রক্রিয়া এত লম্বা সময় না নিয়ে তাড়াতাড়ি ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করুন।’
এ ব্যাপারে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার উল আলম জানান, ‘গুচ্ছ ভর্তি কমিটিও এই ব্যাপারে কাজ করছেন। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যেই সভা করে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’