গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ভোগান্তি লাঘবে যত পরিকল্পনা

  © ফাইল ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে গত বছর ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট না রাখার সিদ্ধান্ত, পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থী মনোনয়নের পদ্ধতি, পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে দ্বিগুণের অধিক করা, পরীক্ষা কেন্দ্র সকলের নিজ নিজ এলাকায় না পড়া, কর্মদিবসে পরীক্ষা, ফলাফলে অসামঞ্জস্যতা এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গ্রহণের নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে এই পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। পরবর্তীতে গুচ্ছ থাকবে, নাকি থাকবে না এটাও নিয়েও বিতর্ক দেখা দেয়।

তবে গুচ্ছে থাকতে উপাচার্যদের অনুরোধ করেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি। এরপর সব জল্পনা-কল্পনা শেষে গত বছরের ভুল সংশোধন করে পুনরায় ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ২০ বিশ্ববিদ্যালয়। এবার তাদের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়। 

এদিকে গুচ্ছে গত বছরে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে গুচ্ছের উপাচার্যরা। শিক্ষার্থীরা যে কেন্দ্র পছন্দ করবে সেই কেন্দ্রেই পরীক্ষার দেবার সুযোগ থাকবে। গতবার পরীক্ষার ফলাফলের পর ভর্তি জন্য একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফের ফি দিয়ে আর আবেদন করা লাগবে না। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ন্যায় কেন্দ্রীয়ভাবে ফলাফলের ভিত্তিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থাকবে। এছাড়া শিক্ষার্থী বাছাই ও ফলাফল যাচাইয়ে যেন কোন সমস্যা দেখা না দেয় সে বিষয়টি এবছর নজর দেয়া হবে বলে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কমিটির নীতি নির্ধারনী উপাচার্যরা জানান। 

শুক্রবার (২৭ মে) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক উপাচার্যদের কমিটির এক সভা হয়। সভা শেষে কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. ড. ইমদাদুল হক তাদের ভর্তি পরিকল্পনার কথা জানান।

তিনি বলেন, গতবার পরীক্ষার কেন্দ্র চয়েজ দিতে হয়েছিল অনেকগুলো। কিন্তু এবার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চয়েজ দেয়া হবে, সেখানেই পরীক্ষা নেয়া হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের পছন্দের কেন্দ্রে পরীক্ষা নেয়া হবে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র চয়েজ দেয়া হবে, সেই বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিবে কিভাবে তাদের ক্যাম্পাসে পরীক্ষা নেয়া যায়। নিজ এলাকার বাইরে গিয়ে ভোগান্তি নিয়ে আর পরীক্ষা দিতে না হয়, এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। এছাড়া পরীক্ষার পর রেজাল্ট অনুসারে কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করে দেয়া হবে। আলাদা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে ফি দেয়া লাগবে না। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার মতো ফলাফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হবে। গতবার যে ভোগান্তি ছিল তা যেন এবার না থাকে, সেই চেষ্টা আমরা করছি। কারণ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবের পরীক্ষা।

তবে গতবারের চেয়ে এবার পরীক্ষা ফি কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানান উপাচার্য ড. ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, করোনার পরবর্তী সময়ে বর্তমানে সব জিনিসের দাম বেশি। সবকিছু বিবেচনা করে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ফি বাড়তে পারে। এছাড়া আগামী ৩ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে শিক্ষার্থীদের সেশনজট কমাতে তার পূর্বে যেন নেয়া যায়, সে বিষয়ে আমরা সভায় আলোচনা করেছি। আগামী ৩০ মে তারিখের সভায় আমরা চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফি, পরীক্ষার ডেট জানিয়ে দিব। 

এদিকে, গত ৮ এপ্রিল গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক সভায় আগামী ৩, ১০ ও ১৭ সেপ্টেম্বর তিনটি ধাপে এই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

তবে শুক্রবার (২৭ মে) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত উপাচার্যদের একটি সভায় সেশনজট কমাতে এই ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ এগিয়ে নিয়ে আসার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পরীক্ষা ফি, পরীক্ষা কেন্দ্র বাছাই, ভর্তি কার্যক্রমসহ একাধিক বিষয়ে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে আগামী সোমবার (৩০ মে) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। 

এবছর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সিলেট), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুলনা), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (দিনাজপুর), মাওলনা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (টাঙ্গাইল), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোয়াখালী), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুমিল্লা), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (ময়মনসিংহ), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যশোর), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (রংপুর), পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবনা), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোপালগঞ্জ), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (বরিশাল), রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাঙ্গামাটি), রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (সিরাজগঞ্জ), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি (গাজীপুর), শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় (নেত্রকোনা), বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জামালপুর), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পটুয়াখালী), কিশোরগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শেষ দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় এবছর নতুন করে গুচ্ছের সাথে যুক্ত হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ