ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস: শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে দ্বিধা বাড়ছে
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার বাকী আর মাত্র ২৬ দিন। আগামী ১ এপ্রিল সারাদেশে একযোগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়েই ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, সম্পূর্ণ সিলেবাসেই হবে ভর্তি পরীক্ষা। সেই আলোকে শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ভর্তিচ্ছুরাও। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস ইস্যুতে শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য দ্বিধা বাড়াচ্ছে শিক্ষার্থীদের। প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
করোনার কারণে ২০২১ সালে মাত্র তিনটি বিষয়ের ছয়টি পত্রে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এইচএসসি পরীক্ষা দেয় শিক্ষার্থীরা। বাকী বিষয়গুলোতে অষ্টম ও এসএসসির ফল ম্যাপিং করে পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশ করা হয়। ফলে ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস কী হবে তা নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিলো। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বারবার বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যে সিলেবাসে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সেই সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা নেয়া উচিত। তবে ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস ইস্যুতে সিদ্ধান্ত স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান নেবে বলেও জানান তিনি।
২৪ ফেব্রুয়ারি ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লিখিত ভর্তি পরীক্ষা ১০০টি প্রশ্নের প্রতিটি এক নম্বর করে মোট (এইচএসসি বা সমমান সিলেবাস অনুযায়ী) ১০০ নম্বরের বিষয়ভিত্তিক বিভাজন পদার্থবিদ্যা ২০, রসায়নবিদ্যা ২৫, জীববিজ্ঞান ৩০, ইংরেজি ১৫ ও সাধারণজ্ঞান (বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ) ১০ অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন- মেডিকেল-ডেন্টাল ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ, এক নজরে দেখে নিন
বিজ্ঞপ্তিতে সিলেবাসের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো কিছু উল্লেখ না থাকায় দ্বিধায় পড়েন ভর্তিচ্ছুরা। এ নিয়ে সমালোচনাও হয়। পরে সিলেবাসের বিষয়ে স্পষ্ট করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির। তিনি বলেন, মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস আগেই ঠিক করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসের আলোকেই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিলেবাস ঠিক করা হয়েছে। তিনি ভর্তিচ্ছুদের বিভ্রান্তিতে না পড়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের আলোকে প্রস্তুতি নিতে বলেন।
এদিকে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এক ভর্তিচ্ছু। তবে এই নোটিশের বিষয়ে ভাবছেন না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।
গতকাল শিক্ষামন্ত্রী গুলশানের একটি হোটেলে অনুষ্ঠান শেষ করে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, চলতি বছরের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে হওয়া উচিৎ। শিক্ষার্থীরা যে পুর্ণবিন্যাসকৃত (সংক্ষিপ্ত) সিলেবাসে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিয়েছে, সে সিলেবাসেই তাদের ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন- সংক্ষিপ্ত সিলেবাস নিয়ে আইনি নোটিশ— যা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
তার এই বক্তব্যে ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, পরীক্ষার আর বাকী কিছুদিন। এখনো পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
আজিজুল হক নামের এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে এ বছর মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেবে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের বক্তব্য মেনেই সম্পূর্ণ সিলেবাসে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে তার মেয়ে। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর একের পর এক সংক্ষিপ্ত সিলেবাস নিয়ে বক্তব্য প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তিনি বলেন, পরীক্ষা নেবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। তারা বলেছে, সম্পূর্ণ সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। আবার শিক্ষামন্ত্রীও বলেছেন, সিলেবাসের বিষয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে। তারপরও কেন তিনি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস নিয়ে বক্তব্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বিধায় ফেলছেন বুঝে আসছে না।
আল আমিন হোসেন নামে এক ভর্তিচ্ছু বলেন, কোচিংয়ে প্রথমে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়িয়েছিলো। ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পুরো সিলেবাসেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়। গতকাল শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য শোনার পর কোন সিলেবাসে প্রস্তুতি নেবো সেটি গুলিয়ে ফেলছি। তিনি বলেন, প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মানুষই মনে করছে না। কোনো সমন্বয় নেই তাদের মধ্যে। যার যখন মন চায় তখন সে ধরনের বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা কতটুকু উপকৃত হচ্ছে বা তাদের কতটুকু ক্ষতি হচ্ছে সেটি দেখার কেউ নেই।