ভর্তি পরীক্ষা: সংক্ষিপ্ত সিলেবাস নিয়ে জটিলতা কাটছেই না
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা কোন সিলেবাস অনুসরণ করবেন তা নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হলেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা নিতে চাচ্ছে। যদিও কয়েকটিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ফলে প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে বেশি বিপাকে পড়েছেন মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়ার জন্য আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বলছে, এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিৎ।
ইতিমধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নিতে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত শুক্রবারও এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেছেন, সিলেবাস পুনর্বিন্যাস করে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষাও ওই সিলেবাসে হওয়া উচিত ওই যৌক্তিক। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব ও বিএমডিসির সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছেন, মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাসের বিষয়টি আগেই ঠিক করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসের আলোকেই ভর্তি পরীক্ষা হবে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নীতিমালাতেও বলা ছিল এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার সিলেবাসের আলোকে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে সেবার তো এইচএসসি পরীক্ষাই হয়নি। তবুও শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসের আলোকেই ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে।
তিনি বলেন, এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। যারা প্রকৃত পক্ষে মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন দেখে তারা অনেক আগে থেকেই নিজেদের সেভাবে প্রস্তুত করেছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিলেবাসের বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেজন্য আইনি নোটিশ নিয়ে আমরা ভাবছি না। নোটিশের জবাব আমরা দেব।
আরো পড়ুন: এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরোদমে ক্লাস শুরুর ঘোষণা
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে যে সিলেবাসে এইচএসসি পরীক্ষা হয়েছে, তার আলোকেই ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গুচ্ছভিত্তিক ৩১ বিশ্ববিদ্যালয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হবে নাকি পুরো সিলেবাসে হবে, সে বিষয়ে ডিনস কমিটির সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ ছাড়া সম্প্রতি ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এটি চূড়ান্ত করা হয়। সভা শেষে ছাত্রকল্যাণ পরিচালন অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পরিমার্জিত সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. ইমদাদুল হক বলেছেন, ‘সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ—দুই সিলেবাসের পক্ষে-বিপক্ষেই যুক্তি রয়েছে। শিগগিরই বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ভর্তিচ্ছু একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, তারা যে সিলেবাসে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, সে আলোকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা না আসায় তারা উদ্বেগে আছেন। পূর্ণ সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে অনেকে বিপাকে পড়বেন। এ জন্য সিলেবাস সমন্বয় করার কথা বলছেন তারা।