২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:০৮

ভর্তি পরীক্ষায় ‘সেকেন্ড টাইম’ দিতে বাধা কোথায়?

ভর্তি পরীক্ষা  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ নেই। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পুনরায় এই সুযোগ চালুর দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন তারা। শিক্ষাবিদরা বলছেন, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পথকে সংকুচিত করেছে।

২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ করা হয় দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ। ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে কোন শিক্ষার্থী একবারই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে। এই সুযোগ বন্ধের পেছনে তিনটি কারণ দেখিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছে, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি রোধ, নতুন শিক্ষার্থীদের বেশি সুবিধা প্রদান এবং শূণ্য আসনের সংখ্যা কমাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরপর দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বাতিল করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। পরে অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ভিসি হয়ে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১৭ সালে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পুনরায় চালু করা হয়। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে তা আবার বাতিল করা হয়।

দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ নেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গতবার দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দিতে বারবার তাগাদা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু তাতেও টনক নড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর।

আরও পড়ুন- সেকেন্ড টাইমের দাবিতে বড় জমায়েত ২৭ ফেব্রুয়ারি

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক শেষে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেয়। সে যদি প্রথমবার অকৃতকার্য হয় কিংবা কোন কারণে চান্স না পায়; আমি ব্যক্তিগতভাবেও মনে করি তাকে অন্তত দ্বিতীয়বার আরেকটা সুযোগ পাওয়া উচিৎ। এবিষয়ে তিনি ইউজিসির সঙ্গে সভাও করেছেন। 

সূত্র জানায়, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুইটি নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায়। নির্দেশনা দুইটি হলো- দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ চালু করা এবং সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া। নির্দেশনা পাওয়ার পর বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।

বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে ভর্তি পরীক্ষা যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে। সভায় শুধু সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কয়েকটি যৌক্তিক কারণেই দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। এটি নিয়ে নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার কিছু নেই।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে। শুধু আমাদের দেশেই সেটি নেই। যে যুক্তি দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সুযোগ বাতিল করেছে সেগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আরও পড়ুন- ‘সেকেন্ড টাইম’ থাকছে জাবিতে!

সম্প্রতি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। রাজমাহী সড়ক অবরোধও করেছে আন্দোলনকারীরা। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি বড় আকারে ঢাকায় সমাবেশ করতে যাচ্ছে তারা।

আন্দোলনের মুখে বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম বলেন, একসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ ছিল। কিন্তু বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে তা বাতিল করা হয়েছে। তবে আবারো দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ থাকবে কিনা এ বিষয়ে ডীনসহ সকলের সাথে আলোচনা করে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে তেমন কোন জটিলতার সৃষ্টি না হয় এবং শিক্ষার্থীদের চাহিদার বিষয়টিও গুরুত্ব পায়। তাই এবিষয়ে আইনসিদ্ধ একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলে যাবতীয় বিষয় ঠিক হবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ থাকা উচিত। আর না থাকলে কমপক্ষে একবছর আগে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেয়া উচিত।

এদিকে শিক্ষবিদরা বলছেন, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ না রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পথকে সংকুচিত করছে। অচিরেই এই ধরনের প্রতিবন্ধকতা তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব না। তারা শিক্ষার্থীদের আকুতি দেখে না। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিবে।