‘সিলেকশন’ নিয়ে ভর্তিচ্ছুদের কপালে চিন্তার ভাজ
সিরাজগঞ্জের উল্লাপড়া সরকারি আকবার আলী কলেজ থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৯০ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে মারিয়া মিম। ভালো ফল করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। এর কারণ হিসেবে মিম বলছেন, ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন করার পর সিলেকশ প্রক্রিয়ায় তিনি বাদ পড়ে যেতে পারেন।
শুধু মিম নয়; ২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কয়েক লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন একই ধরনের সমস্যায়। ভালো ফল করেও ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। সবচেয়ে বেশি শঙ্কায় রয়েছেন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ লাখ ৩ হাজার ২৪৪ জন। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১ জন। পাস করেছে ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন। এদের মধ্যে ৯টি সাধারণ বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগ থেকেই জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬২০ জন।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের চেষ্টা করব—‘সেকেন্ড টাইম’ ইস্যুতে রাবি ভিসি
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালে ‘অটোপাস’ দেওয়া হলেও সেবার ১ লাখ ৬১ হাজরের মতো শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তবে এবার প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। সিলেকশন পদ্ধতি থাকায় জিপিএ-৫ পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন না বলে অভিমত তাদের।
সংশ্লিষ্টদের এমন আশঙ্কার সত্যতা মিলেছে গত বছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পরিসংখ্যান থেকে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটে ১ লাখ ৩১ হাজার ৯০৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন এক লাখ ১৭ হাজার ৯৫৭ জন।
এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ইউনিটে ৪৫ হাজার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে ৪৪ হাজার ৮২৬ জন ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ১৮ হাজার শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় সিলেকশন পদ্ধতির কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সব শিক্ষার্থীরই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার অধিকার রয়েছে। চান্স পাওয়া পরের বিষয়। তবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা যাচাইয়ের সুযোগ সবাইকে দেয়া দরকার।
আরও পড়ুন: মেডিকেলের আদলে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হতে পারে
উম্মে হাবিবা নামে এইচএসসি উত্তীর্ণ এক শিক্ষার্থী বলেন, জিপিএ-৫ পেয়েও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবো কিনা সেই নিশ্চয়তা পাচ্ছিনা। তাহলে এই রেজাল্ট দিয়ে কি করবো। কোথাও চান্স পাবো কিনা সেটি পরের বিষয়। অন্তত নিজের মেধা যাচাইয়ের সুযোগটা দেয়া দরকার। কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিলে এই সমস্যার সমাধান হবে বলেও জানান তিনি।
হাসিবুল হাসান জয় নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেডিকেলের মতো সারা দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা নিলে সবাই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেত। এবছর জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার অনেক বেশি। সেজন্য সিলেকশন না করে সবাইকে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।