১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:৩২

গুচ্ছের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হবে কবে?

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা  © ফাইল ছবি

গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর শুরু হয় গুচ্ছভুক্ত ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত আবেদন। এরপর ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। আর কবে শেষ হবে তা বলতে পারছে না কেউ। শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথমবারের মতো এটি চালু হলেও দুর্ভোগ আগের মতোই রয়ে গেছে।

বিভাগ পরিবর্তনের ইউনিট না রাখার সিদ্ধান্ত, ফি বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে সিলেকশন পদ্ধতিতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ, পছন্দক্রম অনুযায়ী পরীক্ষাকেন্দ্র না পড়া, কর্মদিবসে পরীক্ষা, ফলাফলে অসামঞ্জস্য এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগকেন্দ্র না থাকা— শিক্ষার্থীদের এসব দুর্ভোগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হচ্ছে। এতে অর্থ এবং সময়ও অপচয় হয়েছে ভর্তিচ্ছুদের।

কোনো কোনো শিক্ষার্থীর ১০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। আর সপ্তম বারের মতো মেধাতালিকা প্রকাশ করেও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে না পারায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আবার ভর্তি কার্যক্রম শেষ না করেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস শুরুর তারিখ ঘোষণা করেছে। সবমিলিয়ে একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

শুরুতে ভর্তি কার্যক্রম সমন্বয় করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগে ৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য আসন থাকলে সপ্তম বারের মতো মেধা তালিকা প্রকাশ করে পেয়েছে মাত্র ২১ জন। সব মিলিয়ে সপ্তম মেধা তালিকায় বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য ইউনিটে ফাঁকা আসন ৫৪৩টি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি ইউনিটে মোট আসন সংখ্যা ২ হাজার ৭৬৫টি। অষ্টম মেধা তালিকা প্রকাশ করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় মেধা তালিকার ভর্তি কার্যক্রম সম্প্রতি শেষ হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে তৃতীয় মেধা তালিকা। তবে এখনো তিন ইউনিটে প্রায় দেড় হাজার আসন খালি থেকে গেছে ।

তৃতীয় মেধা তালিকায় ভর্তির পরও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১০ আসন শূন্য আছে। আসন ফাঁকা থাকায় চতুর্থ মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী সাক্ষাৎকার দিয়েও ভর্তি হয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ‘এ’ ইউনিটে ৫০টি, ‘বি’ ইউনিটি ১২১ এবং ‘সি’ ইউনিটে ৩৯টি আসন শূন্য রয়েছে। ‘এ’ ইউনিটে সাক্ষাৎকার হয়েছিল। তারা অনেকেই ভর্তি হয়নি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সবাই হয়রানির শিকার।

শিক্ষার্থী‌রা বলছে, অনেকে ১০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করলেও ভর্তির সুযোগ পায়নি। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সরাসরি মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে। অনেকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভর্তি হয়নি। এতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও নানামুখী ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।

অন্যদিকে, গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় না থাকলেও গুচ্ছের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শতাংশ আসন শূন্য। ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ক্লাস শুরু করতে পারেনি। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ক্লাস শুরুর কথা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। এ কারণে শিক্ষার্থী‌রা আসছে না।

ভর্তির সঙ্গে যুক্ত এক উপাচার্য গণমাধ্যমকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বয়হীনতার কারণেই এই দুর্ভোগ। ভর্তির শুরুতে তাদের মধ্যে সমন্বয় থাকলেও ভর্তির ফল প্রকাশের কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সমন্বয় ছিল না। ভর্তিতে অধিক সংখ্যক আবেদন পড়া এবং মেধাবী শিক্ষার্থী বাছাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতার কারণে শিক্ষার্থী‌দের এই দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।