আগামীতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে শঙ্কা
২০২২ সালের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মানসম্মত শিক্ষার্থী না পাওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি, শিক্ষক নেতাদের চাপসহ নানা কারণে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় কয়েকজন উপাচার্যের অংশগ্রহণের আগ্রহ কমে যাওয়ায় এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভোগান্তি কমানোর আশা দিয়ে নেওয়া গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ‘বেশি ভোগান্তির’ শিকার হওয়ার কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। যদিও আগামী বছর আরও বড় পরিসরে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কথা জানিয়েছেন অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। বিষয়টি নিয়ে করণীয় ঠিক করতে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন তারা। তবে ভোগান্তি বাড়ায় শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ এই পদ্ধতির পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে প্রতিটি ইউনিটে দেড় লাখ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হলেও আবেদনের সময় জিপিএ বেশি চাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারেননি। অন্যদিকে, প্রাথমিক শর্ত পূরণ করে আবেদনের পরে পুনরায় ‘সিলেকশন’পদ্ধতি রাখায় পরীক্ষার সুযোগ বঞ্চিত হন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে তখন বেশ সমালোচনা হয়। এছাড়া চূড়ান্ত আবেদন ফি ৬০০ টাকার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা ১২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এটি নিয়েও্ ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।
সূত্র আরও জানায়, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে বাড়ির কাছে আসন পড়বে এমনটি বলা হয়েছিল। কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী ৫টি কেন্দ্র সিলেক্ট করেও পছন্দের কেন্দ্র না পাওয়ার অভিযোগ ছিল শিক্ষার্থীদের। অনেক শিক্ষার্থীরই নিজ বিভাগের বাইরে অন্য বিভাগে পরীক্ষার কেন্দ্র পড়ে। এতে করে যে উদ্দেশ্যে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন সেটিই ভেস্তে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সব অভিযোগ ছাপিয়ে যায় ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে তাতে অসঙ্গতির বিষয়টি সামনে এলে। প্রথম ‘এ’ইউনিটের ফল প্রকাশ হলে তা নিয়ে অভিযোগের শুরু হয়। এরপর ‘সি’ইউনিটেও অভিযোগের সেই ধারা বহাল ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে ‘বি’ ইউনিটের ফল নিয়ে। সংশোধিত ফল নিয়েও অভিযোগের কমতি ছিল না শিক্ষার্থীদের। প্রশ্ন উঠেছে ফল পুনর্নিরীক্ষার জন্য ২ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ নিয়েও। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা পরবর্তী ফি আদায়ের বিষয়টি নিয়েও ছিল ক্ষোভ।
এদিকে নিজেদের ‘স্ট্যান্ডার্ড’ অনুযায়ী মানসম্মত শিক্ষার্থী না পাওয়া, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, সরকার দলীয় শিক্ষক নেতাদের চাপের কারণে আগামী বছর গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চান না বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তারা বলছেন, এর আগে ভর্তি পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও এবার তুলনামূলক কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাবেন। এতে করে তাদের শিক্ষার মান কমে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুচ্ছভুক্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এর আগে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ শতাংশের উপর নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পেত। তবে এবার সেই মান নেমে গেছে। এবার ৩০ শতাংশ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরাও ভালো বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন। এতে করে তাদের পড়ালেখার যে স্ট্যান্ডার্ড সেটি কমে যাবে। এছাড়া আগে একজন শিক্ষার্থী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ না পেলে কিংবা পছন্দের বিষয় না পেলে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেত। তবে এবার একটি পরীক্ষার মাধ্যমে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এসব কিছু বিবেচনায় আগামী বছর গুচ্ছে যেতে চাই না।
তবে প্রথমবারের ভুলগুলো শুধরে পরবর্তীতে আরও বড় পরিসরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে গুচ্ছভুক্ত থাকতে চাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আর তাদের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে তদারকি সংস্থা ইউজিসিও। ইউজিসি বলছে, প্রথমবার এত বড় পরিসরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করায় কিছু ভুল হবেই। এটি সংশোধন করে আগামী বছর আরও নিখুঁতভাবে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যে উদ্দেশ্যে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হয়েছিল সেটি অনেকটাই সফল। কিছু অসঙ্গতির অভিযোগ উঠলেও তা খুবই নগণ্য। প্রথমবার কোনো কিছু আয়োজন করলে সেখানে কিছু ভুল থাকবেই। তাই বলে সেই প্রক্রিয়াই বাতিল করতে হবে বিষয়টি এমন নয়। যে ভুলগুলো হয়েছে সেগুলো সংশোধন করে আগামী বছর আরও বড় পরিসরে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করার আহবান জানান তিনি।
গুচ্ছে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকা না থাকা প্রসঙ্গে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গুচ্ছে থাকা না থাকার প্রসঙ্গ নিয়ে এখনো কথা বলার সময় আসেনি। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আমরা সকলে বৈঠকে বসবো। সেখানে কারা থাকতে চায় আর কারা থাকতে চায় না সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। এর বাইরে এখন কিছু বলা সম্ভব না।