গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কাল, আসনপ্রতি লড়বেন ১০ জন
আগামীকাল রোববার (১৭ অক্টোবর) গুচ্ছভুক্ত ২০টি সাধারণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এদিন বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।এই পরীক্ষায় প্রতি আসনে লড়ছেন ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থী।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বঞ্চিতরা বলছেন, অটোপাসের কারণে চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন ২০২০-২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় তাদের ফল খারাপ হয়েছে। পরীক্ষা হলে তাদের ফল আরও ভালো হতো। অধিক সংখ্যক জিপিএ-৫ ও পেত না। এতে করে সবাই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেত।
তারা বলছেন, করোনার কারণে গত দেড় বছর ধরে তারা মানসিক যন্ত্রণায় রয়েছেন। তার উপর গুচ্ছ কমিটির একের পর এক হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে মানসিক বিপর্যয়ের চরম সীমায় পৌঁছে গেছেন তারা। এই অবস্থায় আত্মহত্যার মতো গুরুতর পদক্ষেপও নিতে পারেন কেউ কেউ। ১২ বছর ধরে পড়ালেখা করার পর ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ না পাওয়ার চেয়ে কষ্টের আর কি আছে?
বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী নাজনিন জেমি জানান, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি প্রথমে বলল তারা প্রতি ইউনিটে দেড় লাখ শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেবেন। আমরা সেটি মিনে নিলাম। পরে তারা ১ লাখ ৩১ হাজার শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য সিলেকশন করলো। এই সিলেকশন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীরা বিরোধ করে আসছিল। তবে গুচ্ছ কমিটি শিক্ষার্থীদের কোনো কথাই আমলে নেয়নি।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপড়া সরকারি আকবর আলী কলেজের শিক্ষার্থী মারুফা মিম বলেন, বাণিজ্য এবং মানবিক বিভাগে যারা আবেদন করেছে তারা সকলেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। অথচ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। মেধার মূল্যায়ন কি কেবল জিপিএ-৫ দিয়েই হয়ে থাকে। পূর্বে অনেক ভর্তি পরীক্ষায় ডাবল জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ফেল করেছে। অন্যদিকে কম জিপিএ পেয়েও অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করেছে। আমরা অটোপাসের বলি।
শুধু সিলেকশন প্রক্রিয়ার কারণেই শিক্ষার্থীরা অসন্তুষ্ট নন; বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়া নিয়েও অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। বিসয়টি সমাধানে আদালত পর্যন্ত গেছেন ভর্তিচ্ছুরা। বিষয়টি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। যদিও আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছে গুচ্ছ কমিটি।
এ প্রসঙ্গে ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা যতটা না শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব করেছে, তার চেয়ে বেশি হতাশার তৈরি করেছে। প্রথম থেকেই গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে একের পর এক পরিবর্তন এনে শিক্ষার্থীদের চরম বিপর্যস্ত করা হয়েছে । ২০১৬ সালের এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা গত বছরও গুচ্ছতে থাকা অন্তত ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু এবছর সে সুযোগটি নেই। যার কারণে হতাশায় ভুগতে হচ্ছে ২০১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী সহ বহু সেকেন্ড টাইমারদের।
জানা গেছে, ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগসহ তিনটি ইউনিটে রয়েছে মোট ২২ হাজার ১৩টি আসন। এর বিপরীতে আবেদন করেছেন দুই লাখ ৩২ হাজার ৪৫৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে এক লাখ ৩১ হাজার ৯০১ জন, ‘বি’ ইউনিটে ৬৭ হাজার ১১৭ জন এবং ‘সি’ ইউনিটে ৩৩ হাজার ৪৩৭ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন।
জিএসটির গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন হবে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে। এতে মোট ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর। তবে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না।
গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, পরীক্ষাগুলো সুষ্ঠুভাবে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করবো। আশা করি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কমে আসবে। আমাদের প্রত্যাশা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতি ঠেকাতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি। পরীক্ষার সময় কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন টেকনিক্যাল টিম পর্যবেক্ষণে থাকবে।
যে ২৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে সেগুলো হলো- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে-ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।