০৭ অক্টোবর ২০২১, ১৪:২৭

গুচ্ছে আসন বিন্যাস নিয়ে ভোগান্তি, যা বলছে আয়োজক কমিটি

ভর্তি পরীক্ষার্থী  © ফাইল ফটো

গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ১২টা থেকে প্রবেশপত্র সংগ্রহ শুরু হয়। যা আগামী ৯ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত চলমান থাকবে।

এদিকে প্রবেশপত্র সংগ্রহ শুরুর পর থেকেই নিজের পছন্দক্রমের বাইরে সিট পড়ার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, যে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র করার জন্য পছন্দক্রম দেয়া হয়েছিল তার বাইরে তাদের পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে। এমনকি অনেকের নিজ বিভাগের বাইরে অন্য বিভাগে সিট পড়েছে।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বলছেন, গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় আবেদনের সময় একজন শিক্ষার্থীকে নূন্যতম ৫টি কেন্দ্র নির্বাচন করতে বলা হয়েছে। তবে নির্বাচিত পাঁচটি কেন্দ্রের কোনোটিতেই তাদের সিট পড়েনি। এমন কেন্দ্রে সিট পড়েছে, যেখানে তাদের যাতায়াতের সমস্যাসহ পরীক্ষা দিতে গিয়ে থাকা-খাওয়ার সমস্যায় পরতে হবে।

তবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি বলছে, শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিজ এলাকা বিবেচনা করে কেন্দ্র নির্বাচন করা হয়েছে। কেন্দ্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে নিয়ম ছিল সেই নিয়ম অনুযায়ীই শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস করা হয়েছে। যারা কেবলমাত্র পাঁচটি কেন্দ্র সিলেক্ট করেছেন  তাদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।

যদিও গুচ্ছ কমিটির বেঁধে দেওয়া নিয়মের বাইরেও অনেকের সিট পড়ার অভিযোগ উঠেছে।রাজধানীর রামপুরার তরিকুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে পড়ালেখা করেছে ঢাকায়। করোনার কারণে সে তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে অবস্থান করছে। তাই সে ঢাকা, রাজশাহী, পাবনাসহ আশেপাশের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করেছিল। কিন্তু তার পরীক্ষার কেন্দ্র খুলনায় দেওয়া হয়েছে। যেখানে সে জীবনে কখনও যায়নি। এমনকি তাদের পারিবারিক কোনো যোগাযোগও নেই।

বিনয় নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমি পরীক্ষা কেন্দ্রের যে পছন্দক্রম দিয়েছি তার একটাতেও আসে নাই। আসছে খুলনা ইউনিভার্সিটিতে। একেতো আমি হিন্দুধর্মাবলম্বী, তার উপর আমার জেলা কুমিল্লা। কুমিল্লা থেকে কিভাবে এতো দুরে যাবো? কোথায় থাকব, কিছুই মাথায় আসছে না।

একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন মমতাজ নাসরিন নামের আরেক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, পছন্দক্রম অনুযায়ী কেন্দ্র না দিলে কেন্দ্র চয়েস অপশন কেন দেওয়া হলো? চয়েস দেওয়া হয়েছে নোয়াখালী এসেছে, পটুয়াখালী এর মধ্যে দুইদিন পর বুয়েটের পরীক্ষা। ছাত্ররা পটুয়াখালী যাবে কখন আসবে কখন। প্রশাসনের খামখেয়ালির বলি হবে শিক্ষার্থীরা।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত আবেদনের সময় শিক্ষার্থীদের ২৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে ন্যূনতম ৫টি কেন্দ্র পছন্দের তালিকায় রাখতে বলা হয়েছিল। ভর্তিচ্ছুদের এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান কোর্সের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, এসএসসি ও এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর, পাসের বছরসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি বিবেচনা পূর্বক একটি কেন্দ্র-নির্ধারণী স্কোর (সর্বোচ্চ ১০০) প্রস্তুত করা হয়েছে। সে অনুযায়ীই কেন্দ্র নির্বাচন করা হয়েছে।

সূত্র জানায় কেন্দ্র নির্বাচনে নির্ধারিত ১০০ নম্বরের মাপকাঠির মধ্যে স্কুলের অবস্থান (কেন্দ্র হতে দূরত্ব): ২০ নম্বর, কলেজের অবস্থানের ক্ষেত্রে (কেন্দ্র হতে দূরত্ব) ৩০, এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ক্ষেত্রে ১০, এইচএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ক্ষেত্রে ২০, এইচএসসি পাসের বছর (২০১৯-০৫, ২০২০-১০) ১০ এবং ছেলে/মেয়ে (ছেলে- ০৫, মেয়ে- ১০) ক্ষেত্রে ১০ নম্বর নির্ধারণ। প্রাপ্ত স্কোর ও কেন্দ্রের পছন্দক্রমের ভিত্তিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির আহবায়ক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের সময় আমরা শিক্ষার্থীদের নূন্যতম পাঁচটি কেন্দ্র পছন্দক্রম দিতে বলেছিলাম। এর মানে এই না যে ওই শিক্ষার্থী কেবল পাঁচটি কেন্দ্রই সিলেক্ট করবে। তারা আরও বেশি কেন্দ্র পছন্দক্রমে রাখলে এই সমস্যা হতো না। যারা ১০টির নিচে কেন্দ্র পছন্দক্রম দিয়েছে কেবল তাদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র নির্বাচনের সময় আমরা সে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছে সেটি সবার আগে দেখি। এরপর তার স্কুল-কলেজ দেখা হয়। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার্থী মেয়ে না ছেলে সেটিও আসন নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়। সবকিছু বিবেচনা করে তবেই কেন্দ্র নির্বাচন করা হয়েছে।

অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করেছে রাজশাহীতে। তার স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহীতে। তবে সে এখন ঢাকায় থাকে। ওই শিক্ষার্থী ঢাকার মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রের পছন্দক্রম দিলে তার সিট সেখানে পড়বে না। শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা তাদের নিজেদেরই তৈরি করা।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।  এরপর ২৪ অক্টোবর মানবিক বিভাগ ও ১ নভেম্বর বাণিজ্য বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।