বাদ পড়া ভর্তিচ্ছুরাও পরীক্ষায় বসতে চান, আয়োজক কমিটি যা জানালো
গুচ্ছভুক্ত ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগের প্রাথমিক আবেদনকারী সব শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের নেমেছেন। প্রাথমিক আবেদনের ফল প্রকাশ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এসব শিক্ষার্থী। একইসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
তাদের দাবি, আবেদনকারীদের (বিজ্ঞান বিভাগ) মধ্য থেকে কেবল প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজারের মতো শিক্ষার্থী চূড়ান্ত আবেদন ও পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে। এর ফলে প্রায় ৬০ হাজারের মতো শিক্ষার্থীর উচ্চতর শিক্ষাজীবন গুরুতর অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত; অথচ নৈতিক বাস্তবতা এই যে, প্রাথমিক আবেদনকারী সকল শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অধিকার সংরক্ষণ করে। ভোগান্তি দূর করার নাম করে যে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, তা এখন আমাদের মানসিক যন্ত্রণার প্রধান কারণ হয়ে উঠছে।
অন্যদিকে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজক কমিটি বলছে, করোনার বর্তমান বাস্তাবতায় ব্যাপক লোকসমাগমের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা যাবে না। সেজন্য সবাই পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে প্রথম ধাপের চূড়ান্ত আবেদন করার পর কত সংখ্যক আবেদন পড়েছে তার উপর নির্ভর করে পরবর্তীতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের আবারও সুযোগ দেওয়া হবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলন না করে কয়েকদিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজক কমিটি।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক টেকনিক্যাল সাব-কমিটির আহবায়ক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীরা রিএকশনটা ‘টু মাচ আরলি’ দেখাচ্ছে। আমরা তাদের আরও কয়েকটা দিন ধৈর্য্য ধরার আহবান জানাচ্ছি। প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৩১ হাজারের মতো শিক্ষার্থী চূড়ান্ত আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপর আবারও সুযোগ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, মহামারির মধ্যে ব্যাপক লোকসমাগমের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করলে করোনার ঝুঁকিটা থেকেই যাবে। এতে শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই এই ঝুঁকিতে পড়বে। তখন বিষয়টি হিতে বিপরীতে হবে। একজন পরীক্ষার্থী একা পরীক্ষা কেন্দ্রে আসেনা, সঙ্গে অভিভাবকসহ কয়েকজন আসে। এক্ষেত্রে করোনার ঝুঁকিটা বেড়ে যাবে। তাই করোনার বর্তমান বাস্তাবতায় সবাইকে পরীক্ষায় বসানোর ক্যাপাসিটি আমাদের নেই।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যম্পাসকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থী এবং অভিভাকদের কষ্ট লাঘবের জন্য ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছি। এর ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের বাড়ির কাছে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে। তাদের টাকা বাঁচবে। হয়রানি হতে হবে না। শিক্ষার্থীরা মাত্র ১২০০ টাকা দিয়ে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারছে।
অধ্যাপক ফরিদ আরও বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্যই নেয়া হয়েছে। আমরা সব সময় শিক্ষার্থী বান্ধব ছিলাম, আছি এবং থাকব। ভর্তিচ্ছুদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে চিন্তার কোন কারণে নেই। আমরা বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেব।
ভতিচ্ছু শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিকভাবে আলাদা পরীক্ষা নিলে কমপক্ষে ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর যদি পরীক্ষা নিত, তাহলে কমপক্ষে ১০ লাখ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু গুচ্ছে মাত্র ১ লাখ ৩১ হাজার শিক্ষার্থী সুযোগ পাচ্ছেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে বাধা দেওয়া উচিত নয়। এতে হয়রানি কমছে না, বরং আরও বাড়বে।
আরেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী শাওন বলেন, ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় কেনো মাত্র ১ লক্ষ ৯৪ হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়ে পরীক্ষা নিতে পারবে না। যেখানে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগরসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এককভাবে লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়।
প্রসঙ্গত, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদন করেছিলেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪০৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ অর্থাৎ ‘এ’ ইউনিটে আবেদন করেছেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪১ জন শিক্ষার্থী, মানবিক বিভাগ অর্থাৎ ‘বি’ ইউনিটে আবেদন করেছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৯৩৩ জন। বাণিজ্য বিভাগ ‘সি’ ইউনিটে আবেদন করেছেন ৫৭ হাজার ৬৩২ শিক্ষার্থী। মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের সকলেই ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলেও বিজ্ঞান বিভাগের ১ লাখ ৩২ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে বলে জানানো হয়।