২৩ আগস্ট ২০২১, ১৩:৪৯

গুচ্ছ ভর্তি আবেদন ফি দ্বিগুণ, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ভর্তিচ্ছুদের

গুচ্ছ ভর্তি আবেদন ফি দ্বিগুণ, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ভর্তিচ্ছুদের  © ফাইল ছবি

গুচ্ছভুক্ত ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের ফি দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে চূড়ান্ত আবেদন ফি ৬০০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও এখন তা বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করা হয়েছে। আর তাতেই ক্ষোভে ফুঁসছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা।

গত শনিবার (২১ আগষ্ট) গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি দ্বিগুণ করার বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে একটি সংবাদ প্রকাশের পরেই বিষয়টি প্রথম ভর্তিচ্ছুদের নজরে আসে। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তাদেরকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধিকাংশ ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। করোনায় এমনিতেই অনেক পরিবারে আর্থিক টানাপোড়েন, সেইসাথে অনিশ্চয়তায় অনেকেই পড়াশোনার হাল ছেড়ে দিচ্ছে। গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর আগ্রহের মূলে রয়েছে। এখানে আবেদন ফি সবচেয়ে কম নির্ধারণ করা হলেও এখন বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি দ্বিগুণ আবেদন ফি নির্ধারণ করার সিদ্ধান্তকে সংকটময় পরিস্থিতিতে পুরোপুরি অযৌক্তিক মনে করছেন।

তবে আবেদনের ফি দিগুণ বাড়ানো হয়েছে কেন, এ প্রশ্নের জবাবে গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোনাজ আহমেদ নূর বলেন, প্রাথমিক আবেদনে এপ্লিকেন্ট সংখ্যা অনেক কম। আমাদের খরচ চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে এজন্যই আবেদন ফি ৬০০ থেকে বাড়িয়ে তা ১২০০ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শেখ মাইনুর রহমান বলেন, গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদন ফি দ্বিগুণ করার কোন যৌক্তিক কারণ দেখছিনা। এমনিতেই ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা নেবে, সেই হিসেবে আগের ফি যথেষ্ট ছিলো। এখন আবেদন ফি দ্বিগুণ করায় মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য এটা বড় ভোগান্তি।

চট্টগ্রাম থেকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী তৌহিদ মেহেদী বলেন, গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একত্রে হওয়ায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হবে; ফলে সামগ্রিক খরচ বেশি দেখা গেলেও প্রতিটি শিক্ষার্থীর পেছনে বরাদ্দ ব্যয় অনেকটুকুই কমে যায়। এজন্য এই পরীক্ষা বাবদ ফি তুলনামূলক কম হওয়াটাই প্রাসঙ্গিক। এখন ফি দ্বিগুণ করার বিষয়টি আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে।

মো. শাহরিয়ার ফারুক ভূইয়া বলেন, গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে পরীক্ষার জন্য ১২০০ টাকা বেশি নয় কিন্তু ব্যপারটার মধ্যে ফ্যালাসি লুকিয়ে আছে। এই সমীকরণ শুধু তার জন্যই ভালো, যার যেকোন একটি বিষয় বা প্রতিষ্ঠানে পড়লেই হবে এবং তার জন্য খরচ করার মতো অবস্থাতেও সে আছেন। তবে যারা এত বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনিতেই পরীক্ষা দিতো না গুচ্ছ না হলে তাদের জন্য অর্থাৎ করোনার এই দুঃসময়ে মধ্যবিত্ত-নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য আবেদন ফি অনেক ব্যয়বহুল হবে।

সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েরও ভর্তি পরীক্ষার ফি দিতে হয়েছে। কিছুদিন পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন ফি’র জন্যেও খরচ রয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ বলেন, এখন পর্যন্ত অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হয়নি। শুধু আবেদন করেই যাচ্ছি। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সবার আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে। আবেদন ফি যদি ১২০০ টাকা হয় হয় তাহলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার মানে কি? শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও মানসিক কষ্ট যেন নাহয় সেজন্যই তো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা।

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, কর্তৃপক্ষ বলছে আমরা ভেবেছি ৪ লাখের মত শিক্ষার্থী আবেদন করবে। তাহলে আমাদের যে খরচ হবে তা আমরা মিলাতে পারবো। এখন ৩ লাখ ৬০ হাজার আবদেন পড়ছে যা আমাদের জন্য ডিফিকাল্ট। তবে সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আরো শিক্ষার্থীকে সুযোগ দিয়ে আবেদন ফি আগের মতোই রাখতে পারতো। আবেদন কম করায় সব শিক্ষার্থীকে আর্থিক কষ্ট দিলে গুচ্ছের সুবিধা আর কোথায় থাকলো?

তথ্যানুযায়ী, এবার ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রাথমিকভাবে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪০৬ জন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে চূড়ান্ত আবেদন করার কথা রয়েছে ১ লাখ ৫০,০০০ শিক্ষার্থীর, মানবিকে ১ লাখ ৬ হাজার ৭০০ এবং বাণিজ্য বিভাগ থেকে চূড়ান্ত আবেদন করার কথা রয়েছে ৫৮০০০ শিক্ষার্থীর। সব বিভাগ মিলে মোট ৩১৪৭০০ শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত আবেদন করার কথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত আবেদন ফি ১২০০ টাকা নির্ধারণ করা হলে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আয় হবে মোট ৩৭ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।