২৭ জুন ২০২১, ১২:২৭

জাবির ভর্তি আবেদনে জিপিএ বৃদ্ধি করায় স্বপ্নভঙ্গ অনেকেরই

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি আবেদন শুরু হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাই রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।

এজন্য অনলাইনের (juniv-admission.org) মাধ্যমে তাদের আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। আবেদনপত্র পূরণ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আবেদন ফি প্রদান করতে হবে শিক্ষার্থীদের।

এদিকে, ভর্তি আবেদনে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ বৃদ্ধি করায় ভর্তি পরীক্ষায় বসার আগেই স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে অনেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর। বিশেষ করে যারা সেকেন্ড টাইমার তারা দুইবছর ধরে প্রস্তুতি নেয়ার পরও জিপিএ কম থাকায় পরীক্ষা দিতে পারবেন না। এসব ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী জিপিএ যোগ্যতা পূর্বের মতোই করার দাবি জানিয়েছেন।

জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুরু থেকেই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। দেশের একমাত্র আবাসিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে সিলেকশন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

সর্বশেষ গত ১৮ জুন প্রকাশিত হয় জাহাঙ্গীরনগরের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি। এতে বাড়ানো হয় আবেদনের যোগ্যতা। ফলে বিপদে পড়েছে দুই থেকে তিন বছর ধরে প্রস্তুতি নেওয়া সেকেন্ড টাইম শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়,  গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক এ ইউনিটে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ বাদে বাকি বিভাগে আবেদনের যোগ্যতা এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে ন্যূনতম ৪ ও সর্বমোট জিপিএ ৮.৫০ থাকতে হবে। আর কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে মোট জিপিএ-৯.০০ থাকতে হবে।

গতবার কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং মোট জিপিএ ৮.৫০ চাওয়া হয়েছিল। তাছাড়া এই ইউনিটের অন্যান্য বিভাগে মোট জিপিএ ৭.৫০ থেকে ৮.০০ ছিল।

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের বি ইউনিট এবং কলা ও মানবিক অনুষদের সি ইউনিটে আবেদন যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩ দশমিক ৫০ ও সর্বমোট জিপিএ ৮.০০ নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবার এ দুটি ইউনিটের বিভিন্ন বিভাগে মোট জিপিএ ৭.০০/৭.২৫/৭.৫০ এবং ৮.০০ ছিল। কিন্তু এবার সেটি বাড়িয়ে গড়ে মোট জিপিএ ৮.০০ করা হয়েছে।

এবার  সি-১ ইউনিটের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে আবেদনের জন্য আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ ৩.২৫ এবং সর্বমোট ৬.৫০ করা হয়েছে। গতবার ব্যবসায় ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জিপিএ ৬.৫০ এবং মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জিপিএ ৬.০০ ছিল।

এবার চারুকলা বিভাগের জন্য আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ এবং সর্বমোট জিপিএ ৭.০০ থাকতে হবে। গতবার মোট জিপিএ ছিল ৬.০০।

জীববিজ্ঞান অনুষদ তথা ডি ইউনিটে আবেদনের জন্য এবার আলাদাভাবে ন্যূনতম ৪ এবং সর্বমোট জিপিএ-৯ থাকতে হবে। গতবার কিছু বিভাগে মোট জিপিএ ৮.০০ এবং ৮.৫০ ছিল।

বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ তথা ই ইউনিটের জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে জিপিএ ন্যূনতম ৩ দশমিক ৭৫ এবং সর্বমোট ৭ দশমিক ৫০ ও বিজ্ঞান শাখার জন্য আলাদাভাবে জিপিএ-৪ এবং সর্বমোট ৮ থাকতে হবে।

আইন অনুষদ অর্থাৎ এফ-ইউনিটে আবেদনের জন্য ব্যবসায় শিক্ষা/মানবিক শাখায় এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ আলাদাভাবে ন্যূনতম ৪.০০ এবং সর্বমোট ৮.০০ থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বমোট জিপিএ-৮ দশমিক ৫০ থাকতে হবে। গতবার সব শাখায় মোট জিপিএ ৮.০০ ছিল।

আইবিএ ইনস্টিটিউট অর্থাৎ জি-ইউনিটে আবেদনের জন্য জিপিএ আলাদাভাবে ন্যূনতম ৪.০০ এবং সর্বমোট ৮.০০ থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য জিপিএ থাকতে হবে সর্বমোট ৯.০০। গতবার বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য জিপিএ ৮.৫০ এবং বাকীদের মোট জিপিএ ৮.০০ ছিল।

ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি বা এইচ-ইউনিটে আবেদনের ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ ৪ এবং সর্বমোট জিপিএ-৯ থাকতে হবে। গবার সেটি ছিল জিপিএ ৮.০০।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ও তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি তথা আই-ইউনিটের জন্য জিপিএ আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩ দশমিক ৫০ করে সর্বমোট ৭ দশমিক ৫০ থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য জিপিএ সর্বমোট ৮ থাকতে হবে। গতবার  বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য জিপিএ সর্বমোট ছিল ৭.৫০ এবং মানবিকে ৭.০০ ছিল।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় এ, বি, সি, ডি ও ই-ইউনিটের প্রতিটিতে আবেদনের জন্য ইউনিট ফি ধরা হয়েছে ৬০০ টাকা। এছাড়া সি-১, এফ, জি, এইচ, আই ইউনিটের জন্য আবেদন ফি ধরা হয়েছে ৪০০ টাকা। আবেদন ফি মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ, রকেটের মধ্যমে পরিশোধ করা যাবে।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নাফিসা আখতার বলেন, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পূর্বের নিয়মে পরীক্ষা গ্রহণের কথা বলেন। কিন্তু এখন যোগ্যতায় পরিবর্তন এনে আমাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।

রাসেল মাহমুদ নামে সেকেন্ড টাইমার এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কাছে হেরে গেলাম আজ। এসএসসিতে খুব ভালো একটা ফলাফল করার পরেও এইচএসসির ফলে ভাগ্যের কাছে হেরে যাই। নিজের চেষ্টার কোনো কমতি না থাকলে ভাগ্যের কমতি ছিলো। তাইতো ভালো কোনো ফলাফল আসেনি। গুচ্ছ ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বিভাগ পরিবর্তন থেকে যখন বঞ্চিত করে তখন দু’চোখ বন্ধ করে জাবির স্বপ্নে পথ চলি। কিন্তু ভর্তি আবেদনে জিপিএ যোগ্যতা বাড়ায় স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও জানান, জাবির পূর্বের নোটিশ সামনে রেখে হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রস্তুতি নিয়ে আসছে, শেষ সময়ে এসে বি, সি ইউনিটে মোট পয়েন্ট ৩.০০ থেকে ৩.৫০ করা এবং বিভিন্ন বিষয় পয়েন্ট রিকুয়ারমেন্ট বাড়িয়ে দেয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করি। 

ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের বিজ্ঞপ্তিটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন