গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কবে, বলা মুশকিল
প্রথমবারের মতো চলতি বছর দেশের ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন শিক্ষার্থীরা। এই ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদন শেষ হবে আজ শুক্রবার (২৫ জুন) মধ্যরাত ১১টা ৫৯ মিনিটে।
তথ্যমতে, প্রাথমিকভাবে আবেদন থেকে ৬টি ক্রাইটেরিয়া ক্রমানুসারে ব্যবহার করে চূড়ান্ত মেধাক্রম প্রস্তুত করা হবে। তারাই এই ভর্তি পরীক্ষায় বসতে পারবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রথমে এসএসসি ও এইচএসসির প্রাপ্ত জিপিএ ও নম্বর, বিজ্ঞান শাখার এইচএসসিতে যথাক্রমে পদার্থ ও রসায়ন বিষয়ে জিপিএ ও নম্বর এবং মানবিক ও বাণিজ্য শাখার ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ ও নম্বর, এইচএসসিতে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে জিপিএ ও নম্বর ব্যবহার করে মেধাক্রম প্রস্তুত করতে হবে। প্রতিটি ইউনিটে সর্বোচ্চ দেড় লাখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।
জানা গেছে, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৬১ হাজার প্রার্থী (আজ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত)। এর মধ্যে এ ইউনিটে বিজ্ঞান শাখার রয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার, বি ইউনিটে মানবিক শাখার ১ লাখ ৭ হাজার এবং সি ইউনিটের বাণিজ্য শাখায় ৫৮ হাজার প্রার্থী।
এ বিষয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক টেকনিক্যাল সাব-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, ইউনিট প্রতি আমরা দেড় লাখ শিক্ষার্থী নিয়ে এই পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই হিসেবে বিজ্ঞান শাখা বাদে মানবিক-বাণিজ্য শাখার আবেদনকারীরা সবাই পরীক্ষা দিতে পারবে।
এই পরীক্ষা আয়োজক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব অব্যাহত থাকা এবং প্রাথমিক আবেদনকারীদের চূড়ান্ত মেধাক্রম প্রস্তুত সংক্রান্ত জটিলতার কারণে যথাসময়ে এই ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে পারেনি।
তবে আগামীতে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব কমলে পরীক্ষার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। পাশাপাশি চূড়ান্ত মেধাক্রম তালিকা তৈরির কাজ শিগগির শুরু করবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক টেকনিক্যাল সাব-কমিটি। এরপর কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির কাছে এ তালিকা পাাঠালে পরবর্তীতে ভর্তির ওয়েবসাইটে তারা এটি প্রকাশ করবে।
এর আগে গত ১৯ জুন মানবিক বিভাগের, ২৬ জুন বাণিজ্যের ও ৩ জুলাই বিজ্ঞান বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও গত ১১১ জুন গুচ্ছ ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক অনলাইন মিটিংয়ে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সকল বিষয়ে একেক করে আলোচনার ভিত্তিতে মেধা তালিকা প্রকাশ, ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ প্রভৃতি জানানো হবে বলেও মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক টেকনিক্যাল সাব-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, করোনার কারণে ভর্তি পরীক্ষা কবে নেওয়া হবে সেটা বলা মুশকিল। যেহেতু আজ প্রাথমিক আবেদন শেষ হচ্ছে তাই পরবর্তীতে সবাই বসে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
করোনা ছাড়াও আরেকটি কারণে পরীক্ষার দিনক্ষণ পিছিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক আবেদনকারীদের থেকে চূড়ান্ত মেধাক্রম প্রস্তুত করতে কিছু সময় প্রয়োজন হবে। যেহেতু ইউনিট প্রতি আমরা দেড় লাখ শিক্ষার্থী নিয়ে এই পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই হিসেবে বিজ্ঞান শাখার জন্য চূড়ান্ত মেধাক্রম প্রস্তুত করতে হবে। তবে মানবিক-বাণিজ্য শাখার প্রাথমিক আবেদনকারীরা সবাই পরীক্ষা দিতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, এখন আমরা (ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক টেকনিক্যাল সাব-কমিটি) বিজ্ঞান শাখার প্রাথমিক আবেদনকারীদের সবার ডাটাগুলো ডাউনলোড করবো। এতে সবার পূর্ণাঙ্গ ডাটাশিট নাও থাকতে পারে। যেহেতু আমরাতো জিপিএ দিয়ে প্রাথমিক আবেদন নিয়েছি কিন্তু মেধা তালিকা তৈরি করতে বিভিন্ন বিষয়ের নম্বরও দরকার হবে।
অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, শিক্ষার্থীদের নম্বর সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড থেকে পাওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। ধরেন আমরা শিক্ষা বোর্ড থেকে চাইবো কিন্তু লকডাউন কিংবা অন্যকোন কারণে তারা দিতে পারলো না। তাহলে মেধা তালিকা তৈরি করতে তো সময় লাগবে। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে।
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর...
প্রতিটি ইউনিটে আবেদন ফি ধরা হয়েছে ৬০০ টাকা। চূড়ান্ত তালিকায় স্থান হওয়াদের মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট ও নগদের মাধ্যমে এ ফি প্রদান করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে চূড়ান্ত আবেদন সম্পন্ন না করলে পরবর্তী মেধাক্রম থেকে শিক্ষার্থীদেরকে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হবে। চূড়ান্ত আবেদনে ৩১টি পরীক্ষাকেন্দ্রের মধ্যে ন্যূনতম পাঁচটি পছন্দের তালিকায় রাখতে পারবে পরীক্ষার্থীরা, যা পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না।
ভর্তি পরীক্ষার নম্বর ও ফলাফল
নির্ধারিত কেন্দ্রে প্রতিটি ইউনিটে ১ ঘণ্টার ১০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যেকোনো ইউনিটের (A, B, C) পরীক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত শর্ত সাপেক্ষে অন্যান্য ইউনিট–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবেন।
ভর্তি পরীক্ষায় মানবিক শাখায় বাংলা ৪০, ইংরেজি ৩৫ এবং আইসিটিতে ২৫ নম্বর; বাণিজ্য বিভাগে হিসাববিজ্ঞান ২৫, ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২৫, বাংলা ১৩, ইংরেজি ১২ এবং আইসিটিতে ২৫ নম্বর। বিজ্ঞান বিভাগে আবশ্যিক পদার্থবিদ্যা ২০, রসায়ন ২০, বাংলা ১০, ইংরেজি ১০ ও ঐচ্ছিক হিসেবে গণিত, জীববিদ্যা বা আইসিটি যেকোনো ২টি বিষয়ে ৪০ নম্বরের উত্তর দিতে হবে।
বিজ্ঞান বিভাগে ঐচ্ছিক হিসাবে গণিত ও জীববিদ্যা বিষয়ের উত্তর দিলে বিজ্ঞান শাখাসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে। জীববিদ্যা ও আইসিটি বিষয়ের উত্তর দিলে শুধু বায়োলজিক্যাল সায়েন্স (যেমন উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা ইত্যাদি), অ্যাগ্রিকালচার, বায়োকেমিক্যাল সায়েন্স (যেমন ফার্মেসি, বায়োকেমিস্ট্রি ইত্যাদি) বিষয়গুলোতে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে। গণিত ও আইসিটি বিষয়ের উত্তর প্রদান করলে উল্লেখিত বিষয়গুলো ব্যতীত বিজ্ঞান শাখাসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে। এ–সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যসংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
প্রতিটি ইউনিটের পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম প্রস্তুত করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। গুচ্ছভুক্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিজেদের শর্ত উল্লেখসহ দরখাস্ত আহ্বান করবে। ইউনিটভিত্তিক মেধাক্রম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ ব্যবস্থাপনায় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।
গুচ্ছ পদ্ধতির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।