সব ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ পেছানো হতে পারে, ৫ মে বৈঠক
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে চলমান লকডাউন আগামী ৫ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটি আসন্ন ঈদুল ফিতর পর্যন্ত বাড়ানোর আভাস পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় দেশের সব স্বায়ত্তশাসিত ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা পূর্বনির্ধারিত তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ পেছানো যায় কিনা তা নিয়ে আগামী ৫ মে বৈঠক ডেকেছে উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। ওইদিন বেলা ১১টায় অনলাইন মিটিং জুমে এটি হবে বলে জানা গেছে। আজ শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির সভাপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম।
আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষাও পেছানোর চিন্তা
তথ্যমতে, দেশে ৪৬টি স্বায়ত্তশাসিত ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চালু রয়েছে। এরমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় ও ৪টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি ৩৯টিতে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে।
জানা গেছে, এবার তিন গুচ্ছে ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকিগুলোতে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নেবে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেলে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করে উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ।
সে অনুযায়ী, আগামী ২১ মে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ১০ জুন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) এবং ৬ জুন থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আরও পড়ুন: ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু ৩১ জুলাই
তবে করোনার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাধারণ ভর্তি কমিটির এক জরুরি ভার্চুয়াল সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফলে আগামী ৩১ জুলাই থেকে শুরু হবে ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) জাবির কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির ৫ম বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম ধাপে অনলাইন মাধ্যমে আবেদন শুরু হবে আগামী ১ জুন থেকে, আর চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। সে হিসেবে সম্ভাব্য তারিখ ৬ জুন থেকেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে না।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভার সম্ভাব্য তারিখ অনুযায়ী, গুচ্ছ ভিত্তিতে অনুষ্ঠেয় তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট, চুয়েট ও কুয়েট) পরীক্ষা ১২ জুন, গুচ্ছ ভিত্তিতে ৭ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ৩১ জুলাই, ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু ১৯ জুন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু ১৪ জুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু ২২ জুন হওয়ার কথা ছিল।
এর বাইরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে ৪ ও ৫ জুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ জুন, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ জুন ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। আর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ভর্তি পরীক্ষা গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে এ পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জাবিতে ভর্তি আবেদন শুরু ১ জুন
দেশে করোনাভাইরাসের চলমান পরিস্থিতিতে দেশের স্বায়ত্তশাসিত ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভর্তি পরীক্ষার দিনক্ষণ পেছানো নিয়ে কী ভাবছে উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ- জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পেছানোর কথা জানতে পেরেছি। তাছাড়া অন্যকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে আমরা (বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ) আগামী ৫ মে উপাচার্যদের নিয়ে একটি সভা ডেকেছি, সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে এ বিষয়ে (পরীক্ষা পেছানো) সিদ্ধান্ত নেবো।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দেশে করোনা মহামারি চলছে গত বছর থেকে। আমরা আগেই বলে দিয়েছিলাম যে, করোনা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আসলে আমরা সশরীরে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবো।
তিনি আরও বলেন, আগামী ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের একটি মিটিং রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়টি সেখানে এজেন্ডা হিসেবে রয়েছে। মিটিংয়ে পরীক্ষার দিনক্ষণ পেছানো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
চলমান করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষকে যথাযত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় যদি পরীক্ষা তারিখ পেছানোর কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে। তাদের যেকোনো সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাব। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানান তিনি।