ভর্তি পরীক্ষা পেছানো নিয়ে যা ভাবছে ইউজিসি-বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ
আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব স্বায়ত্তশাসিত ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছরের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা পুরোদমে শুরু হওয়ার কথা ছিল। সে হিসেবে ২১ মে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ৩১ মে থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) এবং ৬ জুন থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করেছিল উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। পরিকল্পনায় ছিল জুলাইয়ের মধ্যে সব স্বায়ত্তশাসিত ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ কার্যক্রম শেষ করা।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ মনে করছে, শিক্ষার্থীসহ এর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এবারের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। করোনা সংক্রমণ যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবেই যথাসময়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) বলছে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যদি পরীক্ষা তারিখ পিছানোর কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তবে সেটা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে। এক্ষেত্রে তাদের যেকোনো সিদ্ধান্তকে ইউজিসি সাধুবাদ জানাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন পরামর্শ বা সহযোগিতার প্রয়োজন মনে করে, তবে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে ইউজিসি।
তথ্যমতে, আগামী ২১ মে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে চলমান করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে পরীক্ষা পেছাতে হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পরীক্ষা পেছাবে কি পেছাবে না সে বিষয়ে আগাম কিছু বলাটা ঠিক হবে না। আমরা সবকিছুই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে করে থাকি। ফলে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটি দেখে একটি বিজ্ঞানসম্মত সমাধান করা যাবে।
দেশে ৪৬টি স্বায়ত্তশাসিত ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চালু রয়েছে। এরমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় ও ৪টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি ৩৯টিতে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলের এমবিবিএসের ভর্তি পরীক্ষা ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে আর ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ৩০ এপ্রিল নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। দুয়েকদিনের মধ্যে নতুন তারিখ জানানোর কথা রয়েছে।
জানা গেছে, এবার তিন গুচ্ছে ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকিগুলোতে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নেবে। গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সমেয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেলে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করে কর্তৃপক্ষ। ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় এসব তারিখ ঠিক করা হয়।
পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী ১০ জুন। এর আগে ৩১ মে বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমবারের মতো গুচ্ছ ভিত্তিতে অনুষ্ঠেয় তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট, চুয়েট ও কুয়েট) পরীক্ষা হবে ১২ জুন। গুচ্ছ ভিত্তিতে ৭ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে ৩১ জুলাই। আর প্রথমবারের মতো ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে তিন দিনে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ১৯ জুন, মানবিক ২৬ জুন এবং বাণিজ্যের ৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হবে ৬ থেকে ১৮ জুন এবং ২০ জুন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ জুন ‘সি’ ইউনিট, ১৫ জুন ‘এ’ ইউনিট ও ১৬ জুন ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটে ২২ ও ২৩ জুন, ‘ডি’ ইউনিটে ২৪ ও ২৫ জুন, ‘এ’ ইউনিটে ২৮ ও ২৯ জুন, ‘সি’ ইউনিটে ৩০ জুন এবং ‘বি-১’ ও ‘ডি-১’ উপ-ইউনিটে ১ জুলাই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এর বাইরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে ৪ ও ৫ জুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ জুন, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ জুন ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ভর্তি পরীক্ষা গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া কথা ছিল। তবে এ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
চলমান করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষকে যথাযত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় এখনো যেহেতু দু’মাসের মত আছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যদি পরীক্ষা তারিখ পেছানোর কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে। তাদের যেকোনো সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাব।শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটি দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস তিনি বলেন, এখনই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন নেই। পরীক্ষার এখনো দু’মাসের মত বাকি আছে। বিষয়টি নিয়ে এখনো আমাদের আলোচনা হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছি।