পরীক্ষার আগেই স্বপ্ন ভঙ্গ, বুয়েট সার্কুলারে হতাশ শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশের প্রকৌশল জগতে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। হাজারো শিক্ষার্থীর চোখে স্বপ্ন থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার। বুয়েটে ভর্তি হতে হলে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তবে এবার আবেদন প্রক্রিয়ায় যোগ্যতা পরিবর্তনের ফলে ভর্তি পরীক্ষার আগেই স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে কয়েক হাজার ভর্তিচ্ছুর।
গত ১০ এপ্রিল ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি আবেদনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বুয়েটের সার্কুলার প্রকাশ হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একরাশ হতাশা নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এসব পোস্টে গেল বছর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি আবেদন যোগ্যতা ও এবারের ভর্তি আবেদন যোগ্যতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা গেছে।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি আবেদন যোগ্যতায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলকে প্রাধান্য দিলেও এ বছর শিক্ষার্থীদের এইচএসসি ফলাফল অটোপাস হওয়ার নতুন বিজ্ঞপ্তিতে শুধুমাত্র এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এবার এসএসসিতে যে সকল শিক্ষার্থী পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান ও গণিত এই তিন বিষয়ে মোট ৩০০ নম্বরের ভেতর যারা ২৭০ বা তার চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে একমাত্র তারাই এবার বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদন করতে পারবে।
চট্টগ্রাম থেকে আরমান নামে এক ভর্তি পরীক্ষার্থী বলেন, এতদিন বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু বুয়েটের ভর্তি আবেদন বিজ্ঞপ্তি দেখার পরে খুব হতাশ হয়েছি।
এর আগে গত বছর ২০১৯ -২০ শিক্ষাবর্ষে আবেদনের ক্ষেত্রে এসএসসিত জিপিএ-৪ ও এইচএসসি জিপিএ-৪.৫ এবং পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিতে মোট ৬০০ নম্বরের ভেতর ৪৮০ নম্বর থাকলে আবেদন করা সম্ভব হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবার ভর্তি আবেদন যোগ্যতার ক্ষেত্রে শুধু এসএসসি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান,জীববিজ্ঞান ও গণিতে এ তিন বিষয়ে মোট ৩০০ নম্বরের ভেতর যারা ২৭০ পেয়েছে তারাই আবেদন করতে পারবে। এমন সিদ্ধান্তে আমার মতো হাজারো স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারবে না বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।
মাইনুর নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বুয়েটে এবার ২ ধাপে পরীক্ষা আয়োজন করবে বলে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জেনেছি। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে এসএসসি এর নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে প্রথম ২৪,০০০ জনকে প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষায় বসতে সুযোগ দেয়া হবে। এক্ষেত্রে বুয়েট চাইলে আরো বেশি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে পারতো।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নাজমুল নামে আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আছে যারা এসএসসিতে ভালো ফলাফল করতে পারে নাই কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলো; কিন্তু মহামারি করোনার কারণে পরীক্ষা না হওয়ায় এখন অটোপাসের মাশুল দিতে হচ্ছে।
নাজমুল বলেন, অটোপাশের ফলে আবেদন যোগ্যতায় এইচএসসির ফলাফলকে প্রাধান্য না দিয়ে শুধু এসএসসি পরীক্ষার নির্দিষ্ট বিষয়ের নম্বরের উপর প্রাধান্য দিয়ে ভর্তি আবেদনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ফলে আমার মতো অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবেনা; যা রীতিমতো হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই না।
নিজের হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া পরের বিষয় কিন্তু এখন আবেদনই করতে পারছি না। এতদিন তাহলে কেন কষ্ট করে প্রস্তুতি নিয়েছি? এসএসসির ফলাফল আর এইচএসসির ফলাফল অনেক কিছুর পার্থক্য তৈরি করে। এসএসসিতে আমি জিপিএ -৫ পেয়েও আবেদন করতে পারতেছিনা নম্বর বিবেচনায়।
২০২০ সালে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ হতে একমাত্র রৌপ্য পদক বিজয়ী আহমেদ ইত্তিহাদ হাসিব নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, বুয়েটের প্রকাশিত সার্কুলার অনুযায়ী এসএসসিতে প্রাপ্ত নাম্বার বিবেচনায় আমি বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্য না। বর্তমানে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদন শুরু হবে। অনলাইনের মাধ্যমে এ আবেদন চলবে ২৪ এপ্রিল বেলা তিনটা পর্যন্ত। আবেদন করার নিয়ম: আবেদন করার নিয়ম ভর্তির নির্দেশিকা (Guideline) বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট (www.buet.ac.bd)-এ পাওয়া যাবে।