রাবির ভর্তিযুদ্ধ: ব্যতিক্রম প্রস্তুতিই হতে পারে সফলতার চাবিকাঠি

  © ফাইল ফটো

সময় যতো এগিয়ে যাচ্ছে নবীনদের পদচারণা পেয়ে উৎসবমূখর হতে ততোই যেন ব্যস্ত হয়ে উঠছে মতিহারের সবুজ চত্বর। নবীনদের স্বাগত জানাতে ৭৫৩ একরের ভূমি প্রতিনিয়ত হচ্ছে ফুলে-ফলে-গন্ধে পরিপূর্ণ। তেমনি আকাশচুম্বি চির যৌবনা গগণ শিরিশ গাছের সৌন্দর্যে নতুন রূপে সাজতে শুরু করেছে চিরচেনা প্যারিস রোডের বুক।

বলছিলাম, দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা, যা দেশের লাখো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর এক স্বপ্নের নাম। যার প্রকৃতি সৌন্দর্য ও সাজানো-গোছানো পরিবেশ নিমেষেই নজর কাঁড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজারো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর।

সেই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে ২০২০-২১ সেশনে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে দেশের লক্ষাধিক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী তাদের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভর্তি যুদ্ধে অংশ নেয়ার সুযোগ অর্জন করেছে।

তবে এবছর নির্ধারিত সংখ্যক আবেদনের সুযোগ না থাকায় পরীক্ষার হল পর্যন্ত আসার সুযোগ হারিয়েছে দেশের আরো লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে এবছর ভর্তি পরীক্ষা অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছে তিন ইউনিটে এক লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী। যেখানে পূর্বের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার করে মোট ৯৬ হাজার। করোনায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অটো পাস দেয়ায় আবেদন সংখ্যা কিছুটা বাড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তবে দুই ধাপে হওয়া ভর্তি আবেদনের প্রাথমিক পর্যায়ে তিন লক্ষাধিক আবেদন পড়লেও চূড়ান্ত আবেদন শেষে তার মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ৬৪৭টিতে। ফলে সাত হাজার ৩৫৪টি আবেদন ফাঁকা রেখেই অনুষ্ঠিত হবে এবারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধ।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিভিন্ন বিভাগে বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যার তুলনায় আবেদন বেশি পড়ায় আসন প্রতি লড়বে ৩১ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। যেখানে মেধা, শ্রম, সৃজনশীলতা, বিচক্ষণতা ও ব্যাতিক্রম প্রস্তুতির সমন্বয়ে ৩০ জন প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে একটি আসন দখলে নিতে হবে একজন শিক্ষার্থীকে।

প্রতিযোগিতায় নিজের সর্বোচ্চ স্থান দখলের লড়াই চালিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করে কীভাবে স্বপ্নের রাবি ক্যাম্পাসে আসা যায়? সে সম্পর্কে ভর্তিচ্ছুদের উদ্দ্যেশে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় এ ইউনিটে দ্বিতীয় হওয়া শিক্ষার্থী সোহাগ আলী।

এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় ভীত নয় বরং আত্মবিশ্বাসকে দৃঢ় করে নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের দিকে ছুটতে হবে। তোমার পিছনে কে, সামনে কি এসবের দিকে নজর দেয়ার সময় এখন নয়। তোমার গন্তব্য একটাই, সেটা হলো তোমার স্বপ্নের ক্যাম্পাসের একটি সিট।’

তিনি বলেন, ‘সেজন্য অবশ্যই তোমাকে অন্যের থেকে ব্যতিক্রম চিন্তার অধিকারী হতে হবে। তেমনি প্রস্তুতিও নিতে হবে ব্যতিক্রমভাবে। কেননা সবার মতো তুমি হতে চাইলে অন্যরা তোমার থেকে এগিয়ে যাবে। সুতরাং তোমার লক্ষ্য যদি হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এখনই সময়, নিজেকে তৈরি করো নিজের মতো ব্যতিক্রম ধারায়।’

ভর্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান মিলু বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের কাছে এক স্বর্গরাজ্য। কেননা চির সবুজ ক্যাম্পাসের অপরূপ সৌন্দর্য্য নিমেষেই কাঁড়ে হাজারো শিক্ষার্থীর নজর। ঠিক তেমনি রাবিতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আসন সংখ্যা একটু বেশি। তাছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ এর উপর রাখা হয় না কোন নম্বর।’

তিনি বলেন, ‘এর ফলে একজন পরীক্ষার্থী যদি দৈনিক রুটিন অনুযায়ী পড়াশোনা করার পাশাপাশি বোর্ড বই ও সহায়ক বইগুলো ভালোভাবে পড়ে। তাহলেই তার চান্স পাওয়া সম্ভব হবে।’

শিক্ষার্থীদের পড়াশুনোর সময়সীমার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে পড়াশোনার ধরা-বাঁধা কোন সময় নেই। দৈনিক যতটুকু পড়ার সময় দেয়া সম্ভব, একজন ভর্তিচ্ছুকে ঠিক ততোটুকুই সময় দিতে হবে। যেহেতু রাবির ভর্তি পরীক্ষার জন্য আরও আড়াই মাসের মতো সময় আছে। এ অল্প সময়েও যদি কেউ সঠিকভাবে পড়াশোনা করে, সে অবশ্যই চান্স পাবে বলে আমি আশাবাদী।’

বাজারে ভর্তি গাইডলাইনের জন্য হাজার রকমের বই রয়েছে। যেহেতু এ অল্প সময়ের মধ্যে সব বই পড়ে শেষ করা সম্ভব নয়, সেহেতু বিগত বছরের ধারণা নিয়ে রাবির জন্য একটি মানসম্মত বই কিনে পড়াশোনা করলেই যথেষ্ট। সেক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীকেও অবশ্যই প্রোডাক্টিভ হতে হবে। কেননা দিন শেষে তারাই কিছু করে, যারা নিজেকে ভিন্নভাবে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়।’


সর্বশেষ সংবাদ