মেডিকেল ভর্তিতে নম্বর কর্তনের নিয়ম বাতিলের দাবি ভর্তিচ্ছুদের
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবারের এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের বিশেষ সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভর্তিচ্ছুরা। তারা ৫ বা ৭.৫ নম্বর কর্তনের নিয়ম বাতিল অথবা কর্তনকৃত নম্বরের পরিমাণ হ্রাসের আবেদন জানিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী বরাবর লেখা এক চিঠিতে তারা এ দাবি জানান।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বরাবর লেখা চিঠিতে তারা এ দাবি জালেও এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদফতর। চিঠিতে তারা বলেন, ‘আমরা ২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। ইতিমধ্যে আমরা শিক্ষা কার্যক্রম থেকে প্রায় দুই বছর পিছিয়ে গিয়েছি, যে ক্ষতি অপূরণীয়। করোনা পরিস্থিতি, এইচএসসি ও পরবর্তী ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি, নিজেরাসহ পরিবারের সদস্যদের কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়া, এমনকি আমাদের কারো কারো আপনজনের মৃত্যুতে আমরা যে মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছি, সেটি হয়তো মুখে বলে বা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়।’
এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত সময়ের সুযোগটিও অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর পক্ষেই কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি জানিয়ে তারা বলেন, ‘কেউ কেউ কাজে লাগাতে চাইলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকা এবং সর্বোপরি নিজের ও পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রাইভেট টিউটরের সহযোগিতা বা নির্দেশনাও গ্রহণ করতে পারিনি।ফলে প্রস্তুতিতে ঘাটতি থেকেই গেছে। অপরদিকে এইচএসসি ২০১৯ সালের আমাদেরই যেসব সহপাঠী ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক ছিলো তারাও ২০২০ সালের এইচএসসির সাথে বিকল্প ফলাফলে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা না দিয়েই আশাতীত ফলাফল লাভ করেছে।’
তারা আরো বলেন, ‘প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষাতেও প্রথমবার অংশগ্রহণকারীদের মতো ৫ বা ৭.৫ নম্বর না কাটাসহ অন্যান্য সমস্ত সুযোগ লাভ করবে। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু দেশেও পরীক্ষার্থীরা সমান সুযোগ-সুবিধাসহ পরপর তিনবার মেডিকেল ভর্তির জন্য ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি এন্ড এনট্রান্স টেস্টে বসার সুযোগ পায়। এমতাবস্থায় যেখানে ০.২৫ নম্বরের গুরুত্ব সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলেই অবহিত সেখানে ২০১৭ সাল থেকে কার্যকর হওয়া এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ৫ বা ৭.৫ নম্বর কর্তনের বিষয়টি কি এই পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য অবিচার নয়!’
মেডিকেল ভর্তিচ্ছুরা বলেন, ‘এমন সংকটপূর্ণ বাহ্যিক ও মানসিক পরিস্থিতে যেখানে অন্যান্যবারের তুলনায় প্রায় তিনগুণ পরীক্ষার্থী বিনা পরীক্ষায় বিকল্প পদ্ধতিতে জিপিএ-৫ লাভ করেছে এবং মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় এ ফলাফলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিদ্যমান, সেখানে ইতিমধ্যে ৫ বা ৭.৫ নম্বর কম নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা আমরা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত মনে করছি না। এ অবস্থায় একাডেমিক পরীক্ষা স্থগিত রেখে পরবর্তী শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের অটোপ্রমোশন প্রদান, এ শিক্ষাবর্ষের জন্য পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটোপাশসহ শিক্ষার্থীদের প্রতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর পূর্ববর্তী সদয় সিদ্ধান্তসমূহ আমাদেরকে আশার আলো দেখিয়েছে।’
এসময় তারা দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এ অবস্থায় আমরাও আমাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও মেধার সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ এবং জাতির সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করার প্রতিজ্ঞা পূরণের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।সমগ্র বিশ্বের এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে উল্লিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনায় মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট আসন্ন এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এইবারের জন্য মাত্র কিছুদিন পূর্বে কার্যকর হওয়া ৫ বা ৭.৫ নম্বর কর্তনের নিয়মটি বাতিল অথবা কর্তনকৃত নম্বরের পরিমাণ হ্রাসের বিষয়টি সদয় বিবেচনার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি। এছাড়া আমাদের কঠোর পরিশ্রম ও মেধার মূল্যায়ন করে চিকিৎসাসেবার মহান পেশায় নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ প্রদানপূর্বক দেশ ও জাতির সেবাকার্যে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ প্রদানের জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি।’
জানা গেছে, আগের নিয়মেই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা নেবে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলো। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে আগামী ২ এপ্রিল এমবিবিএস এবং ৩০ এপ্রিল ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিটের বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা হবে। এ বছর আগের নিয়মেই ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে। এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১০০ নম্বরসহ মোট ২০০ নম্বরের জাতীয় মেধা তালিকা প্রণয়ন করে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন।