০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:০৫

পরীক্ষার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন শেষ কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর!

ভর্তি পরীক্ষা  © প্রতীকি ছবি

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মূল্যায়ন ফলে ন্যূনতম স্কোর করা সত্ত্বেও সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গুচ্ছের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। বিপাকে পড়েছেন বিভাগ পরিবর্তন ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরাও। তারা বলছেন, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ না দিয়ে বাছাইপর্বে এভাবে বাদ দেয়া কাম্য নয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এইচএসসি ও সমমানের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষার ভর্তি যুদ্ধে নামার আগেই বাদ পড়তে পারেন ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী। তারা সবাই মানবিক বিভাগের। তথ্যমতে, এবার ৯টি শিক্ষাবোর্ডে মানবিক বিভাগ থেকে ছয় লাখ ২৭ হাজার ৬৪২ জন শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এর মধ্যে জিপিএ ৩-এর নিচে পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ২৪ হাজার ২৯০ জন। যারা ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাথমিক আবেদনও করতে পারবেন না। বাকি থাকা ৫ লাখ ৩ হাজার ৩৫২ জন এসব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে প্রাথমিক আবেদন করতে পারবেন। যদিও এদের মধ্যে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন বলেই প্রাথমিক জানা যাচ্ছে।

অন্যদিকে, মাদ্রাসা বোর্ডে এবার ৮৮ হাজার ৩০২ জন আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছেস। এর মধ্যে জিপিএ ৩-এর নিচে পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আট হাজার ৬৮০ জন। মাদ্রাসার আলিম পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ থাকলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাতেগোনা।

ফল বিশ্লেষণের তথ্য, এ বছর ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ইউনিটে প্রাথমিকভাবে এইচএসসির মানবিক বিভাগ থেকে পাস করা পাঁচ লাখের মতো শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। আর আলিম থেকে পাস করাদের মধ্য থেকে আবেদনের যোগ্য হবেন ৫০ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী। সবমিলিয়ে সাড়ে ৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী মানবিক ইউনিটে ভর্তির আবেদন করতে পারলেও দুই লাখ শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় বসার ‍সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ছাড়াই অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

এইচএসসি ও সমমানের ফল বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, এবার ৯টি শিক্ষাবোর্ডের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে দুই লাখ ৬৮ হাজার ২৪৪ জন্য পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে। এর মধ্যে জিপিএ ৩-এর নিচে পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাত হাজার ৫২৬ জন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক আবেদন থেকে যাচাই-বাছাই করা নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রার্থীকেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার যে সুযোগে কথা বলা হচ্ছে, তাতে বিজ্ঞান ইউনিটের শিক্ষার্থীদের তেমন কোন সমস্যা হবে না। অপর দুই গুচ্ছ কৃষি ও প্রকৌশলের ৯টিতে ছাড়াও সব মিলিয়ে আরও ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন তারা। তাছাড়া মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজেও ভর্তি হতে পারবেন তারা।

অন্যদিকে, এবার ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে দুই লাখ ৪৯ হাজার ৪৪৩ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে। এর মধ্যে জিপিএ ৩-এর নিচে পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪২ হাজার ৬৫০ জন। সে হিসেবে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় ইউনিটে প্রাথমিকভাবে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন এবার এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পাস করা দুই লাখের মতো শিক্ষার্থী। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক বাছাইয়ে খুব অল্প সংখ্যাক শিক্ষার্থী বাদ পড়বেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং জিএসটি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সংশ্লিষ্ট ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার কেন্দ্র থাকবে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কত করে আসন রাখা যাবে তার তালিকা তৈরি করতে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা আসলে তখন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কতটি পরীক্ষার আসন করা হবে তা ফাইনাল করা যাবে। তবে ইউনিট প্রতি দেড় লাখ থেকে পৌনে দুই লাখ শিক্ষার্থীকে বেছে নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় বিভাগ পরিবর্তন ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরাও: এদিকে এইচএসসিতে বিজ্ঞান কিংবা বাণিজ্য বিভাগে পড়লেও অনেকেই মানবিক বিভাগের বিষয় নিয়ে পড়তে চান অনেক শিক্ষার্থী। এতদিন নিজেদেরকে সেভাবেই প্রস্তুত করে আসছিলেন এসব শিক্ষার্থীরা। কিন্তু হঠাৎ করেই ভর্তি পরীক্ষায় বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন। বিভাগ পরিবর্তনে ইচ্ছুক এসব শিক্ষোর্থীরা আলাদা ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন।