৩১ জানুয়ারি ২০২১, ১০:৫২

কঠিন ভর্তিযুদ্ধের মুখে ভর্তিচ্ছুরা, বাদ পড়বেন জিপিএ-৫ ধারীরাও

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল। পরীক্ষা না হওয়ায় জেএসসি-এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল গড় করে শনিবার (৩০ জানুয়ারি) এইচএসসির ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাই দেড় লাখের বেশি। অথচ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন রয়েছে ৫০ হাজারেরও কম। ফলে উচ্চশিক্ষায় কঠিন ভর্তিযুদ্ধের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীরা।

সদ্য ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, দেশের ৯টি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পাস করেছেন ১৩ লাখ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। আগের বছর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। সে হিসেবে এবার অটোপাসে জিপিএ-৫ পেয়েছে তিনগুণেরও বেশি। এবার ছাত্রদের মধ্যে ৭৮ হাজার ৪৬৯ জন এবং ছাত্রীদের মধ্যে ৮৩ হাজার ৩৩৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। জিপিএ-৫ পাওয়াদের মধ্যে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।

এবার শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করায় দেশের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভর্তিযুদ্ধ তীব্রতর হতে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগে সর্বাধিক জিপিএ-৫ পাওয়ায় মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। এছাড়া ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগরের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও তীব্র প্রতিযোগিতা হবে ভর্তি পরীক্ষায়। জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীও এবার কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পারেন না। তবে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে পর্যাপ্ত আসন থাকায় সবাই ভর্তির সুযোগ পাবেন।

ব্যানবেইসের তথ্য মতে, দেশের সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও কারিগরিসহ উচ্চশিক্ষায় আসন আছে ২২ লাখ ৬২ হাজার। আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৪৬ হাজার ৭৪৪টি। সেক্ষেত্রে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সব জিপিএ-৫ ধারী ভর্তি হতে পারলেও এক লাখের বেশি জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী বাদ পড়বেন। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লাখ ৬১ হাজার, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৫৩ হাজার আসন রয়েছে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ লাখ আসন থাকায় সবাই ভর্তির সুযোগ পাবেন।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবার শুধু বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ২৩ হাজার ৬২০ জন। তাদের জন্য মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ১৬ হাজারের কিছু বেশি। ফলে তাদের সিংহভাগই এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাবেন না। ভিন্ন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোয় ভর্তি হতে হবে তাদেরকে।

ফলাফল প্রকাশের পর এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘যেহেতু এবার সবাই পাস করেছেন, সেহেতু সকলের হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সম্ভব হবে না। আমাদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে তাও তো নয়। আমাদের আরও নানা রকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। কারিগরি শিক্ষার অনেক জায়গা আছে। সেখানে জায়গা খালি থাকে, কিন্তু আমরা শিক্ষার্থী পাই না। এবার আশা করি সেদিকে অনেকেই যেতে উদ্বুদ্ধ হবেন। এটা তাদের জন্যও ভালো, দেশের জন্যও ভালো।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গত বছর যে সুযোগ ছিল, এবারও স্বাভাবিকভাবে যতটুকু বেড়েছে ততটুকুই। তাতে যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তারাসহ সবাইকেই এই পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে, বিভিন্নভাবে এ পরীক্ষা হবে। কাজেই সেখানে তারা তাদের মেধার পরিচয় দিয়ে, স্বাক্ষর দিয়েই ভর্তির সুযোগ পাবেন।’ 

ইতিমধ্যে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ভর্তি পরীক্ষা কমিটি কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা হবে, কত নম্বরের মধ্যে পরীক্ষা হবে, কতটুকু এমসিকিউ থাকবে, কতটুকু লিখিত থাকবে- সেগুলোর বিষয়ে ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত আছে। এখন যেহেতু ফলাফল প্রকাশ হয়েছে, সেহেতু এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- তারিখ নির্ধারণ করতে হবে। এখন ডিনবৃন্দ বসে শিগগিরই তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।’

আর গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি প্রস্তুতিমূলক সভা রয়েছে। তবে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঠিক হবে উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায়।’ তিনি জানান, মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলেই পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে তিনি।