বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট রাখতে জবি উপাচার্যকে খোলা চিঠি

পরীক্ষার্থী ও ইনসেটে জবি উপাচার্য মীজানুর রহমান
পরীক্ষার্থী ও ইনসেটে জবি উপাচার্য মীজানুর রহমান  © ফাইল ফটো

জানি স্যার ম্যাসেজ সিন করবেন না, তবুও লিখছি...

আসলে কি বলব কিছুই বুঝতে পারছিনা স্যার, কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট থাকবে না বলে আপনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু স্যার এই সিদ্ধান্তটা নেওয়ার আগে কি ভেবেছিলেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ওই বিভাগ পরিবর্তন ইউনিটে পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। এদের মধ্যে যারা সেকেন্ড টাইমার আছে তারা আজকে দেড় বছর ধরে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য পড়ছে, তাদের প্রস্তুতি এক প্রকার শেষ বলা যায়, অনেকে মহা খুশি ছিল এবার সৃষ্টিকর্তার রহমত হলে একটা আসন পাবে আর বহুদিনের স্বপ্ন পূরন করবে।

আর আমরা ফার্স্ট টাইমার যারা আছি আমরা তো যেদিন থেকে শুনেছি আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা হবে না, তার পর থেকেই বিভাগ পরিবর্তন ইউনিটের পড়া শুরু করে দেই। অনেকে আবার কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে বই কিনে পড়ছে। ফার্স্ট টাইমারদের মধ্যেও অনকের প্রস্তুতি প্রায় শেষ ভাগে। ঠিক এমন একটা সময়ে এসে বলছেন এই ইউনিটটাই আর থাকছে না। তখন আমাদের কাছে ব্যপারটা কেমন লাগে যদি আপনাকে সেটার বিন্দু মাত্র বোঝানো সম্ভব হত!

আপনাদের কি উচিত ছিলো না, যে মিনিমাম ১ বছর আগে জানিয়ে দেওয়া? এবছর ঢাবিতে শেষ বারের মত বিভাগ পরিবর্তন ইউনিটে পরীক্ষা হবে। আগামী বছর থেকে সেটা থাকছে না। এটা ঢাবি কর্তৃপক্ষ এক বছর আগেই জানিয়ে দিয়েছে। যার কারণে পরেরবার সবাই বুঝে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে। অথচ আমাদের বেলায় হল কি? স্যার আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, আমরা সকল জেলার ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বিভাগ পরিবর্তন ইউনিটের দাবিতে মানববন্ধন করেছিলাম। কিন্তু তাতে আপনারা কর্নপাত করেননি। আজকে আমার ভাইয়েরা পর পর দুইবার ঢাকায় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। অথচ আপনাদের কাছে এই আর্তনাদ পৌঁছাচ্ছে না, বা পৌঁছালেও সেটা আপনারা হয়ত কানে নিচ্ছেন না।

স্যার একবার ভাবুন তো, এই পরিস্থিতিতে আপনি পড়লেন, তখন কি করতেন? সব পরিস্থিতি কিন্তু সামলে নেওয়া সম্ভব হয় না। আপনারা এমন সময়ে বললেন যেখানে সবাই নিজেকে একটা ইউনিটের জন্যে প্রায় প্রস্তুত করে ফেলেছে। এখন এমন সময় আমাদের জন্য এই রকম একটা সিদ্ধান্ত যে কতটা হতাশার সেটা শুধুমাত্র আপনার সন্তান কিংবা আপনি ফেইস করলে বুঝতেন স্যার। হতাশা যে কতটা ভয়াবহ! আমাদের অনেক ভাইবোন আছে যারা কিনা এবার তাদের বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরন করবে বলে কথা দিয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে। আমাদের হাতে ৩ মাসের মত সময় আছে। এই স্বল্প সময়ে নিজ ইউনিটের বিষয় পড়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া এক প্রকার অসম্ভব! কারণ একটা বিষয়ে এতদিন পড়ে হুট করে আরেকটাতে মুভ করা খুব সহজ নয়।

এই ৩ মাসে আমরা পড়ে পাস কর‍তে পারব। কিন্তু স্যার বোর্ড পরীক্ষায় পাস করা আর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার মধ্যে যে অনেক তফাৎ। এই তিন মাস আমাদের জন্যে যথেষ্ট নয়। এছাড়াও সকলের সামর্থ্য নেই চড়া মূল্য দিয়ে সাইন্সের বিষয় গুলোর জন্যে কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া। তাই অনেক শিক্ষার্থীর মেধা থাকা সত্ত্বেও বিভাগ পরিবর্তন নিয়ে পড়েছিল কারণ তাদের সবার স্বপ্ন একটাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সেটা যে ভাবেই হোক। কিন্তু এখন এই পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে আমাদের স্বপ্ন দেখা উচিৎ হয়নি।

স্যার হতে পারে আপনার সন্তান কখনো এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি বা হবেও না, কারন আপনারা চাইলেই আপনাদের সন্তানকে যেকোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারেন। কিন্তু আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্যে এসব বিলাসিতা সাজেনা। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কি সবার কথা ভাবা উচিত না? যে সিদ্ধান্তে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন জড়িত (যদিও সবাই চান্স পাবে না) সেই সিদ্ধান্তটা একটু ভেবে নিলে কি হত?

স্যার দয়া করে আমাদের মনের অবস্থাটা একবার বুঝুন। এই হতাশায় হয়ত অনেকেই আত্মহত্যাও করবে বা করছেও, জানি এতে আপনাদের কিছু যায় আসেনা। কিন্তু যে বাবা-মায়ের সন্তান হারাবে কেবল সেই বুঝবে কতটা কষ্টকর। স্যার হতাশা মানুষকে অনায়াসেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। স্যার দয়া করে আমাদের বর্তমান অবস্থাটা বুঝে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন। আমরা আপনার সন্তান নয় সত্য, কিন্তু সন্তানের মত।


সর্বশেষ সংবাদ